শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪

কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন নিজের মনকে?

যা যা মিস করেছেন

নিজের মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা কারো কারো কাছে সহজ, আবার কারো কারো কারো কাছে বেশ কঠিনই। আমাদের অনেকের ভেতরেই মন ও মস্তিষ্কের যুদ্ধ প্রায়ই চলতে থাকে। নিজে মনের মালিক না হয়ে মন নিজের মালিক হলে, প্রয়োজনীয় কাজগুলো সঠিকভাবে করা প্রতিনিয়ত আমাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে থাকে। যেমন অনেক দিন ধরে হয়তো চাইছেন খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে, ওজনটা কমানো দরকার, কিন্তু মজাদার খাবারগুলো দেখলে আর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আবার সামনে হয়তো পরীক্ষা, পড়তে বসা দরকার, কিন্তু প্রিয় ভিডিও গেমস বা সিরিয়ালটার সামনে থেকে হয়তো আর উঠতেই পারছেন না। এভাবে প্রতিনিয়ত নিজেদের অভ্যাসের কাছে হেরে যাওয়া প্রথম ধাক্কায় ছোটখাটো কিছু মনে হলেও আস্তে আস্তে এটা যে আমাদের কত বড় ক্ষতি করে ফেলে, তা একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। আবার আমাদের অনেকের মাঝেই অতিরিক্ত চিন্তা করার বা অল্পতেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। এটিও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।

তাই আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার সামর্থ্যটি থাকা প্রয়োজন। আর আমাদের যাদের জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটা কঠিন, তারা বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই কিন্তু নিজেদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন শুধু একটুখানি সদিচ্ছা আর দৃঢ় মনোবল। তাহলে চলুন আর দেরি না করে দেখে আসা যাক কী করে কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা সহজেই নিজেদের মনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি।অন্যভাবে ভাবুন
১. অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করুন আপনি হয়তো প্রায় সময়ই নিজেকে কোনো না কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তারত অবস্থায় খুঁজে পান। হয়তোবা আপনি জিনিসটি নিয়ে ভাবতে চান না, তবুও বারবার চিন্তাটি আপনার মাথায় হানা দিতে থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আপনি কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

আপনি যে বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন, তার সম্ভাব্য ফলাফলটি কী হতে পারে, তা চিন্তা করে বের করুন। এরপর খারাপ জিনিসটি হলে সেটা আপনি কীভাবে সামলাবেন, তা খুঁজে বের করুন। এভাবে করে যখন আপনি দেখবেন আপনার কাছে সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটি সামলানোর মতো ব্যবস্থা রয়েছে, তখন আপনার দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে।
চিন্তা করার জন্য আপনার সারাদিনের রুটিনের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন। এরপর সারাদিনে অন্য কাজ করার সময় যখনই আপনার মাথায় অতিরিক্ত কোনো চিন্তা আসবে আপনি নিজেকে মনে করিয়ে দিন আপনি ওই নির্দিষ্ট সময়টিতে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করবেন। এভাবে আপনি সারাদিন অতিরিক্ত চিন্তার চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
মাঝে মাঝে বাইরে হাঁটতে বের হন। বাইরে হাঁটতে বের হওয়ার ফলে প্রকৃতি ও পরিপার্শ্বের সংস্পর্শে আপনার মন হালকা হবে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবে।
২। পরিবর্তনে আস্থা রাখুন
আপনি যদি নিজের উপর বিশ্বাস না রাখেন যে আপনি বদলাতে পারেন, তাহলে কারো পক্ষেই আপনাকে বদলে দেওয়া সম্ভব না। কারণ এই আস্থাহীনতার ফলে আপনার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পেছনে আপনার যতটা শ্রম দেওয়ার কথা ছিল, ততটা শ্রম আপনি দেবেন না আর এতে করে আপনি আশানুরূপ ফলাফলও পাবেন না। তাই যদি খারাপ অভ্যাসগুলোকে এবার পুরোপুরি ইস্তফা দিয়ে নিজের মনের মতো একজন মানুষ হতে চান, তাহলে নিজের উপর আস্থা রাখুন যে আপনি চাইলেই বদলাতে পারেন।

এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় যেসব মানুষের ‘গ্রোথ মাইন্ডসেট’ রয়েছে, অর্থাৎ যেসব মানুষ বিশ্বাস করে তাদের দিয়ে ভালো কিছু সম্ভব বা তারা নতুন কিছু চাইলেই শিখতে পারে। এসব মানুষ ‘ফিক্সড মাইন্ডসেট’ এর মানুষ, অর্থাৎ যারা মনে করে তাদের দিয়ে আর নতুন বা ভালো কিছু সম্ভব না, তাদের তুলনায় যেকোনো বিষয়ে
৩। নিজের সক্ষমতার উপর ইতিবাচক মনোভাব রাখুন
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আপনার আসলেই যতটুকু ক্ষমতা আছে নিজেকে সামলানোর, ততটুকুর উপর বিশ্বাস রাখাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু গবেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। আপনি নিজেকে সামলাতে পারেন এ বিষয়ে অতিরিক্ত ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনার ভেতরে নিজেকে সামলানোর জন্য আরো বেশি জোর এনে দেয়।আপনার সক্ষমতার উপর ইতিবাচক হবার জন্য বারবার নিজেকে মনে করাতে থাকুন আপনি নিজেকে সামলাতে পারবেন। যদি এমন কোন সময় আসে যে আপনার মনে হচ্ছে আপনি নিজেকে সামলাতে পারবেন না, চোখ বন্ধ করে নিজেকে মনে করাতে থাকুন আপনি নিজেকে সামলাতে পারেন।
নিজেকে বারবার মনে করাতে থাকুন কোন সময়গুলোতে আপনি নিজেকে সফলভাবে সামলাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে কখনো নিজের ব্যর্থতার কথাটি মনে করবেন না।
৪। কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলুন
ধরুন দীর্ঘদিন ধরে আপনি ধূমপান বা মদ্যপান ছাড়তে চাইছেন, কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছেন না। এক্ষেত্রে মদ বা সিগারেটের প্রতি আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটিই বদলে ফেলুন। ভাবতে থাকুন মদ বা সিগারেট অনেক বিষাক্ত কিছু দিয়ে তৈরি। এটি আপনার শরীরে প্রবেশের সাথে সাথে আপনার শরীরে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে, আপনার শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে এটি বিষক্রিয়া ছড়িয়ে দেবে। আপনি এটি ভাবতে থাকুন ও মনেপ্রাণে বিশ্বাস ও করতে থাকুন। গবেষণায় দেখা যায়, কোনো জিনিসের প্রতি নেতিবাচক চিন্তা তার প্রতি আসক্তি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়। তাই আপনি যখন যে জিনিসটির প্রতি আপনার আসক্তি রয়েছে, সে সম্পর্কে নেতিবাচকভাবে ভাবতে শুরু করবেন। ফলে, জিনিসটির প্রতি চাহিদা ও আপনার অনেকটাই কমে যাবে।
৫। ভবিষ্যতের উপর অতীতের কালো ছায়া রোধ করুন
আমাদের মাঝে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এক ধরণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা হচ্ছে এরা তাদের পুরনো কোন ব্যর্থতার জের ধরে তাদের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ বিচার করে থাকে। এদেরকে প্রায়ই এ ধরনের কথা বলতে শোনা যায়, যেমন- “আমার ছোটবেলাটা অনেক খারাপ কেটেছে, আমি জানি আমার পুরো জীবনটাই অনেক খারাপ যাবে!” এ ধরনের চিন্তাভাবনা বন্ধ করতে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো:

আপনি আপনার ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব আপনার ভাগ্যের উপর ছেড়ে না দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে নিন। আপনি নিজেকে বলুন আপনি আপনার ভাগ্য নিজের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে গড়ে নেবেন। কাজেই এখানে আপনার পেছনের জীবনে কী হয়েছিল, তা কোনো কাজে আসছে না।
এক্ষেত্রে আপনার জীবনে উন্নতি করার জন্য আপনার কী কী করা প্রয়োজন, সেগুলো আপনি খুঁজে বের করুন, প্রয়োজনে কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। ভাগ্য দিয়ে নিজেকে নয়, নিজের কাজ দিয়ে ভাগ্যকে পরিবর্তনের চেষ্টা করুন।
৬। সব দোষ ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন
এটি আসলে চিন্তার একটি ফাঁদের মতো, যেখানে আপনি এমন সব জিনিষের জন্য নিজেকে দায়ী করে থাকেন, যার জন্য আপনি কোনোভাবেই দায়ী নন। যেমনটি ধরুন আপনার মেয়ে স্কুলের পরীক্ষায় খারাপ করেছে, আর আপনি ভাবতে শুরু করলেন, “হায়! এটা আমারই দোষ, আজকে আমার পোড়া কপালের জন্যই মেয়েটা পরীক্ষায় খারাপ করেছে!” কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, ব্যাপারটা আসলে কতটা অযৌক্তিক। এখানে আপনার কপালের সাথে কিন্তু আপনার মেয়ের বা তার পরীক্ষার কোন সংযোগই নেই। কাজেই এখানে নিজের কপালের দোষ দেওয়ার কোন অর্থই হয় না। তাই এভাবে সবকিছু ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য যা করতে পারেন তা হলো:প্রতিটি ঘটনা আবেগ দিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে নিজের যুক্তি দিয়ে চিন্তা করুন। এর ফলে কোনো ব্যর্থতায় আপনার সম্পৃক্ততা বা ভূমিকার পরিমাণ সম্পর্কে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন।
নিজের ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার হন। আপনার যতটুকু দোষ, ততটুকুই নিজের কাঁধে নিন। এর থেকে কম বা বেশি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৭। অতিরিক্ত পূর্বানুমান বাদ দিন
এটিও একটি চিন্তার ফাঁদ। এখানে মানুষ কিছু চিন্তাভাবনা না করেই শুরু থেকেই একটি নেতিবাচক ফলাফল ভেবে নিয়ে বসে থাকে। যেমন, ধরা যাক আপনার কোনো বন্ধু হয়ত কারো সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছে, আর আপনি কোনো কারণ ছাড়াই বলে বসলেন, “আরে বাদ দাও, দরকার নেই। উনি এমনিতেও আমাকে পছন্দ করবেন না!” আসলে কিন্তু এমনটা ভাবার কোনো মানেই হয় না। এসব চিন্তা থেকে দূরে থাকার জন্য,

কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে একটি বিরতি নিন এবং নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন। যেমন উদাহরণটির কথাই চিন্তা করা যাক। আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি যে ভাবছি লোকটি আমাকে পছন্দ করবেন না, কেন করবেন না? এছাড়া তিনি যে আমাকে পছন্দ করবেন না, তার কি কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ আছে?
এভাবে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করে নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার হয়ে নিন। নিজের কাছে কোনো ধোঁয়াশা রাখবেন না।
৮। নেতিবাচক ভবিষ্যৎ চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন
আমাদের মাঝে আরেক ধরনের মানুষও দেখা যায়, যারা তিল থেকে তাল বানাতে পটু। যেমন একজন হয়ত কলেজ বা ভার্সিটির কোন পরীক্ষায় ফেল করেছেন, আর তিনি তখনই ভেবে নিলেন, “আমি পরীক্ষায় ফেল করেছি, আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না, আমার জীবন এখানেই শেষ!” ছোট্টও একটা ব্যপারে তারা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন এবং রীতিমতো ডিপ্রেশনে চলে যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য,

বেশি বেশি ইতিবাচক চিন্তা করুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার এই পরীক্ষাটির সাথে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্পর্ক কতটুকু? এছাড়াও এই একটি পরীক্ষার সাথে সাথে কি আপনার সবগুলো পথ বন্ধ হয়ে গেছে?
অন্যদের সাথে কথা বলুন এবং এমন কাউকে খুঁজে বের করুন যিনি জীবনে বিভিন্ন ব্যর্থতা সত্ত্বেও পরবর্তীতে ভালো কিছু করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security