...
শনিবার, জুন ১৫, ২০২৪

সমাজসেবা কার্যালয়ে জীবিত হয়েও মৃত!

যা যা মিস করেছেন

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্ত মোঃ এনামুল হক (৩৪)। হঠাৎ করে ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ জানতে চেয়ে বই নিয়ে হাজির হন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে। কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। এনামুলসহ চারজনকে এভাবে মেরে ফেলেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। তাদের বদলে নতুন চারজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে।

অভিযোগপত্রে হতে জানা যায়, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মজিদ এর পুত্র মোঃ এনামুল হক জুলাই ২০১৮ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২৩ইং সালের শেষের দিকে কয়েক মাস ভাতা না পাওয়ায় ভাতার বই নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চান।

তখন কার্যালয় থেকে বলা হয়, এ কার্ডের সুবিধাভোগী মারা গেছেন, তিনি আর ভাতা পাবেন না। এনামুল বললেন, এ কার্ডের সুবিধাভোগী মালিক আমি স্বয়ং আপনার সামনে জীবিত দাঁড়িয়ে ! আমি মারা গেলাম কীভাবে? তখন বলা হয়েছে, আপনি ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করুন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২৫ অক্টোবর উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুমের সভাপতিত্বে ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বয়স্ক ভাতা ১৩৮ জন, বিধবা ২২ জন ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১০ জনসহ ১৭০ জন মৃত ভাতা সুবিধাভোগী তাদের স্থলে নতুন সমান সংখ্যক ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরি করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।

তাছাড়া গতবছরের ২২ ডিসেম্বর ৬নং ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূম স্বাক্ষরিত ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যায়নপত্রে এনামুল হক গত ২০২১ইং সালে ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়।

একই তারিখের অপর পৃথক তিনটি প্রত্যায়নপত্রে ২০২১ইং সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মাগুরা গ্রামের আলীর মেয়ে ছায়রা বেগম, গোয়ালবাড়ির মৃত মস্তাকিন আলীর স্ত্রী শারিজুন নেছা একই বছরের ৩রা জুলাই এবং মাগুরা গ্রামের বীরেশ চন্দ্র সেনের মেয়ে শ্রী অঞ্জলী রানী দে ২০২২ইং সালের ১৭ই মে মৃত্যুবরণ করেন বলে উল্লেখ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। চেয়ারম্যান প্রদত্ত ১৭০ জনের তালিকা ধরে তদন্ত করলে আরও অসংখ্য জীবিতকে মৃতের তালিকায় পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জীবিতদের মৃত দেখিয়ে প্রত্যায়নপত্র দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূম ও ৬নং ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন এজন্য একতরফাভাবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে দায়ী করেন। তারা উভয়ই বলেন, ‘সমাজসেবা কার্যালয় থেকে উপরোল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে মৃত্যুসনদ দেওয়ার জন্য আমাদের বলা হলে আমরা তা প্রধান করি। পরে জানতে পারলাম উনারা জীবিত। তখন নতুন করে প্রত্যায়নপত্র দিয়ে তাদের ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করা হয়।’ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন ছাড়া তাদের মৃত্যুর তারিখ কোথায় পেলেন?- এমন প্রশ্নের কোনো সদোউত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সকল ভাতা ভোগীদের হালনাগাদ তথ্য সকল ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা যাচাই-বাছাই করে মৃত্যুসনদ/প্রত্যায়নপত্রসহ মৃতদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করি। অনেক সময় কিছু মেম্বার অবৈধ লেনদেন করে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে বাদ দিয়ে অন্যকে তালিকাভুক্ত করেন। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কোন দায় নেই। গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে যাদের মৃত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাদের পুন:রায় ভাতার আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য হলে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.