...
শনিবার, জুন ১৫, ২০২৪

পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার চিকিৎসকের, সংবাদ সম্মেলন

যা যা মিস করেছেন

আরিফুল ইসলাম রনক, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

নওগাঁয় এক প্রসূতি মেয়ের পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক ড. তানিয়া রহমান তনি।

বুধবার (২২ মে) দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. তানিয়া রহমান তনি বলেন, গত সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। প্রকাশিত সংবাদ আদৌ সত্য নয়। সংবাদে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের সময় প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৫ মে সকাল ৮টার দিকে নওগাঁ শহরের একতা ক্লিনিক থেকে একটি জরুরি সিজারিয়ান সেকশন (অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব) জন্য তাঁকে কল করে ডাকা হয়। সেই রোগীর নাম সুমি খাতুন (৩০)। তিনি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া গ্রামের উজ্জ্বল হোসেনের স্ত্রী। রোগীর প্রয়োজনীয় রুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক দেখার পর তিনি সফলভাবে সিজারিয়ান সেকশন সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে তিনি রোগীকে দেখার জন্য ক্লিনিকে যান এবং রোগীর সব ভাইটাল প্যারামিটার স্বাভাবিক পান। এর দুই ঘন্টার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁকে কল করে একতা ক্লিনিক থেকে সুমি খাতুনের কিছু সমস্যা সম্পর্কে জানানো হয়। কল পেয়ে ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন, রোগীর পেটের সেলাইয়ের স্থান থেকে হালকা রক্ত চুঁইয়ে বের হচ্ছে। এ সময় তিনি লোকাল এনেস্থেসিয়া প্রয়োগ করে রোগীর পূর্বের দুইটি সেলাই কেটে একই জায়গায় নতুন করে সেলাই দেন। রক্তপাত সংক্রান্ত অন্য কোনো জটিলতা বা ব্যাধি আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে তিনি রোগীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু রোগীর স্বামী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অসম্মতি জানান এবং রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য ইচ্ছাপোষন করেন। রোগীর অভিভাবকের ইচ্ছা অনুযায়ী ওই দিন রাতেই প্রসূতি সুমি খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

চিকিৎসক তানিয়া রহমান আরও বলেন, সুমি খাতুন নামের ওই প্রসূতিকে রেফার্ড করার পাঁচ দিন পর গত সোমবার চিকিৎসকের অবহেলায় সুমি খাতুন নামের ওই রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি রামেক হাসপাতালের গাইনি এন্ড অবস বিভাগের যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন, সেখানে ল্যাপরেটমি করার পর রোগীর পেটে কোনো গজ পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীর হেল্প সিন্ড্রোম ধরা পড়ে। হেল্প সিন্ড্রোম গর্ভাবস্থাকালীন বা প্রসব পরবর্তী একটি জটিলতা। প্রসব পরবর্তী সময়ে অনেক রোগীরই হেল্প সিন্ড্রোম হয়ে থাকে, যা পূর্ব থেকে ধারণা করা যায় না। এর সঙ্গে সার্জারির কোনো সম্পর্ক নেই এবং সংশ্লিষ্ট সার্জন কোনোভাবেই দায়ী না। সংবাদে রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ এবং গজ রেখে সেলাই দেওয়ার কারণেই রোগীকে আইসিইউতে শিফট করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্নভাবে বানোয়াট, মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন একটি সংবাদ।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তানিয়া রহমান বলেন, হেল্প সিন্ড্রোম কারণে একটা রোগীর অনেক ধরণের জটিলতা দেখা যেতে পারে। হেল্প সিন্ড্রোম সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস বা প্রসবের পরপরেই শুরু হয়। কারও হেল্প সিন্ড্রোম সমস্যা থাকলে এবং তাঁর অস্ত্রোপচার করা হলে রোগীর লোহিত রক্তকণিকা ভাঙনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এতে খুব সহজে রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায় না। সুমি খাতুন নামের ওই প্রসূতির ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৫ মে সুমির অস্ত্রোপচারের সময় অপারেশন থিয়েটারে তাঁর সঙ্গে একতা ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফ ও অন্যান্য নার্সরা ছিলেন। এ সময় সুতা কাটার সময় আব্দুর রউফ তাঁকে সহযোগিতা করেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

তানিয়া রহমান জানান, রামেক হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস বিভাগের চিকিৎসক কলি রাণীর নেতৃত্বে সুমির ল্যাপরেটমি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডা. কলি রাণী বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো রোগীর চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার একজন চিকিৎসক করেন না। মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে সব সময় টিম ওয়ার্ক হয়ে থাকে। সুমি খাতুন নামের ওই রোগীর চিকিৎসাও টিম ওয়ার্কের মাধ্যমেই হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আমি এই মূহূর্তে ফোনে কোনো মন্তব্য করতে চাইনি। এ বিষয়ে জানতে বিভাগের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

প্রসূতি সুমি খাতুনের চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে রামেক হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস বিভাগের প্রধান ডা. রোকেয়ার মুঠোফোনে কল দিয়ে রিসিভ না হওয়ায় তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রসূতি সুমী খাতুনের স্বামী উজ্জ্বল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী এখনও রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। নওগাঁয় একতা ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের অবহেলার কারণে তাঁর স্ত্রীর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার কারণে তাঁর স্ত্রীর বর্তমানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.