...
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

অশ্রুভরাক্রান্ত চোখে ফুটবলকে বিদায় জানালেন আগুয়েরো

যা যা মিস করেছেন

১৮ বছরের ক্যারিয়ার। ৪০০-র বেশি গোল। আর্জেন্টিনার ক্লাব ইনদিপেন্দিয়েন্তে থেকে শুরু করে স্পেনের আতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে গিয়ে ইংল্যান্ড জয়, এরপর গত আগস্টে বার্সেলোনায় যাওয়া। কতশত মনে রাখার মতো মুহূর্ত। আর্জেন্টিনার জার্সিতে আলো ছড়ানো অনেক মুহূর্ত তো আছেই! হৃদয় ভেঙে দেওয়া মুহূর্তও অনেক ছিল তাঁর।সের্হিও আগুয়েরোর হৃদয় রাঙিয়ে যাওয়া এমন ক্যারিয়ারের শেষ টেনে দিতে হলো হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে। বার্সেলোনায় এক অনুষ্ঠানে আজ কান্নাভেজা চোখে ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিলেন আগুয়েরো। মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই ফুটবল মাঠ থেকে অতীত হয়ে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। কী অসহায় বিদায়!গত অক্টোবরে বার্সেলোনার জার্সিতে আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধে বুকে হাত দিয়ে মাঠে বসে পড়েন আগুয়েরো। সেখানে কিছুক্ষণ শুশ্রুষার পর তাঁকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই শোনা গিয়েছিল, আগুয়েরো হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের পুরোনো সমস্যাটা আবার জটিল হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনই যে, তাঁকে ফুটবল ছেড়ে দিতে হতে পারে, এমন গুঞ্জন তখন শোনা গিয়েছিল। বার্সেলোনা তবু তখন জানিয়েছিল, তিন মাস আপাতত মাঠের বাইরে থাকবেন আগুয়েরো। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, এই সময়ে তাঁর হৃদযন্ত্রে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে, চিকিৎসা চলমান থাকবে। কিন্তু এর মধ্যেই মাঝে মধ্যে বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা আর আগুয়েরো-ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদই আসছিল সংবাদমাধ্যমে। তাঁর অবসর নিতে হওয়ার গুঞ্জন জোর পাচ্ছিল।

গুঞ্জনটাই দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিল। আগুয়েরো অবসর ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, এমনটা দুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। তাঁর অবসর ঘোষণার জন্য বার্সেলোনা আজ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেখানে কান্নাভেজা চোখ নিয়ে আগুয়েরো জানিয়ে দিলেন, বিদায়!

‘এই সংবাদ সম্মেলনটা আয়োজনের উদ্দেশ্য এটা জানানো যে, আমি ফুটবল খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভীষণ কঠিন একটা মুহূর্ত এটা, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার মধ্যে দ্বিধা নেই’—বার্সেলোনার মাঠ ক্যাম্প ন্যু-তে আসা দর্শক-ভক্তদের সামনে ঘোষণাটা দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আগুয়েরো।কেন এ সিদ্ধান্ত, সেটি তো বলতে গেলে সর্বজনবিদিতই। আগুয়েরোর বর্ণনায় ফুটে উঠল অসহায়ত্ব, ‘শরীরের কথা ভেবেই সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে। ডাক্তাররা এটাই বলেছেন আমাকে যে, খেলা বন্ধ করে দেওয়াই আমার জন্য ভালো হবে। দশ দিন আগে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম।’

সিদ্ধান্তটা নেওয়ার, সেটি ঘোষণা করার মুহূর্তটা আগুয়েরোর জন্য কতটা কঠিন, সেটি হয়তো সহজেই অনুমেয়। আগামী কিছুদিনেও হয়তো বিষণ্ণতা ঘিরে রাখবে আগুয়েরোকে। তবে চোখটা যখন অতীতে ফেরাবেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার, ক্যারিয়ারের রঙিন শত মুহূর্ত হয়তো চোখ ঝাপসা করে দেবে তাঁর।

‘নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আমি গর্বিত। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার অনুভূতি হয় আমার। আমি তো শুধু পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নই দেখতাম। ইউরোপে এসে খেলতে পারব, এটাই কখনো কল্পনা করিনি’—বিদায়বেলায় আগুয়েরোর উপলব্ধি।গর্ব করার মতো ক্যারিয়ারই বটে! আর্জেন্টাইন ক্লাব ইনদিপেন্দিয়েন্তেতে আলো ছড়িয়ে ইউরোপের নজরে আসা, সেখান থেকে আতলেতিকোতে পাঁচ বছরে ইউরোপের সেরাদের একজন হয়ে ওঠা।

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সোনালি সময়টা অবশ্য আগুয়েরো কাটিয়েছেন ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার পর। ইংলিশ লিগের ইতিহাসের সেরা ভিনদেশি ফুটবলারদের সারিতে তাঁর নাম তো থাকবেই, অনেকের চোখে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সেরাই তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিছু না পাওয়ার হতাশাও কেটেছে গত জুলাইয়ে, কোপা আমেরিকা জয়ে।

চোট আর পেপ গার্দিওলার কৌশলের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে ক্লান্ত আগুয়েরো এই মৌসুমে সিটির সঙ্গে চুক্তি শেষে যান বার্সেলোনায়। স্পেনে শোনা যায়, প্রিয় বন্ধু লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলার ইচ্ছাতেই তাঁর বার্সায় যাওয়া। কিন্তু জাতীয় দলে সতীর্থকে ক্লাবেও পাশে পাওয়া আর হলো না। বার্সেলোনার আর্থিক অবস্থার বলি হয়ে মেসিকে যেতে হলো পিএসজিতে। আগুয়েরো তবু খেলে চলছিলেন ঠিকই, ২৪ অক্টোবর বার্সার জার্সিতে প্রথম গোল পেলেন। প্রতিপক্ষ? রিয়াল মাদ্রিদ!

আগুয়েরো অবসর নিতে যাচ্ছেন শুনে গতকাল ইংলিশ লিগে লিডসের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকেরা গানে-গানে আগুয়েরোর নামটা স্মরণ করেছিলেন। নামটা যে তাঁদের হৃদয়ে বাঁধা। থাকবে না-ই বা কেন! ২০১২ সালে ম্যান সিটির ৪৪ বছরের লিগ শিরোপাখরা ঘোচানো মুহূর্তটা যে আগুয়েরোরই এনে দেওয়া।

তা-ও কী অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায়! লিগের শেষ ম্যাচে সান্ডারল্যান্ডের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জিতেছিল, কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে তাই সিটিকে জিততেই হতো। এমন ম্যাচে যোগ করা সময়ের সিটিকে ৩-২ গোলে জেতানো গোলটা আগুয়েরোরই।

‘সান্ডারল্যান্ডে ম্যাচটা শেষ হয়েছে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যতটুকু করার তা করেছে। ম্যানচেস্টার সিটির স্বপ্ন এখনো বেঁচে আছে। বালোতেল্লি। আগুয়েরোওওওওওওওওওওও! দিব্যি দিয়ে বলতে পারি, এমন কিছু আর কখনোই দেখতে পাবেন না আপনি’—আগুয়েরোর সেই গোলের মুহূর্তের বর্ণনাই হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারের উজ্জ্বলতম মুহূর্ত।ওই মুহূর্ত হয়তো আর দেখা যাবে না। মুহূর্তের জনককেও আর ফুটবল মাঠে দেখা যাবে না নিশ্চিত।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.