সোমবার, এপ্রিল ৮, ২০২৪

লকডাউনে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শঙ্কা

যা যা মিস করেছেন

করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে দেশে চলছে লকডাউন-কারফিউ। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ঘরবন্দী হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে নারী ও মেয়েশিশুর প্রজননস্বাস্থ্য। এছাড়াও এ লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘ইমপ্যাক্ট অব দ্য কোভিড ১৯ পেনডেমিক অন ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড এনডিং জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১১৪টি দেশে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিরাপদ গর্ভপাতের হার বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে বিশ্বে অতিরিক্ত ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অতিরিক্ত ৩ কোটি ১০ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটবে।

ইউএনএফপিএ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা পূরণে বাধা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যথাযথ সেবাদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সেবা নিতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

ইউএনএফপিএর হেলথ সিস্টেম স্পেশালিস্ট দেওয়ান মো. ইমদাদুল হক বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ প্রজননক্ষম (১৫-৪৯ বছর) জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার মধ্যে গর্ভধারণ করে ১৫ শতাংশ। এদের মধ্যে গর্ভকালীন জটিলতায় অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে হয় ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা নেয়ার হার কমবে। মায়েরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। আবার যে নারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাকে সেবা দেয়া নিয়েও জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের ফলে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কি না, তা নিয়ে এখনো তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর এলাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও অপহরণের ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ধর্ষণের, আটটি যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পাঁচটি অপহরণ ও ছয়টি যৌন নিপীড়নের মামলা।

ব্র্যাকের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ উদ্যোগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, ‘এই সময়ে বিশেষভাবে নারীর অবস্থা বুঝতে যে জরিপ চালিয়েছি সেখানে দেখেছি, মাস্ক এমনকি সাবানের ব্যবহারেও নারী সমান অধিকার পাচ্ছেন না। ৭০ শতাংশ পুরুষ যেখানে মাস্ক ব্যবহার করছেন, নারীর ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে, তাই মেয়ের ওপর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ বেড়েছে।’ ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, এই সময়ে পরিবারে এবং পাড়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহ বন্ধের পরিকল্পিত চেষ্টা বিঘ্নিত হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সাবিরা নূপুর জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার থামলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা যাবে মেয়ে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি ছেলে শিশুদের চেয়ে কমে গেছে। এরপর যেকোনো উপায়েই হোক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ২১টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, গর্ভপাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ বলেন, এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেয়ার যে কার্যক্রম, তা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। মানুষ অলস সময় কাটাচ্ছে বলে নারীদের গর্ভধারণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, সরকারের হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে গত ২৬ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত কল এসেছে ৭০ হাজার। তবে বেশির ভাগ ফোন দিচ্ছেন করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানার জন্য।

তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষের কাজ নেই, হাতে টাকাপয়সা নেই, সেই অবস্থায় ঘরের ভেতরে পারিবারিক নির্যাতন বাড়ার একটা আশঙ্কা আছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security