প্রয়াত নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ১৩ নভেম্বর। দিনটি হিমু দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। তাই প্রতি বছরের মতো ঢাকার তেজগাঁওস্থ চ্যানেল আই চেতনা চত্বরে পালিত হবে হিমু মেলা। এছাড়াও সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আজ শুরু হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা। বিকেল সাড়ে চারটায় ছয় দিনের এই মেলার উদ্বোধন করবেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মেলার আয়োজন করেছেন হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশকেরা।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় তার দুই ছেলে নিষাদ, নিনিত ও স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পরে কবর জিয়ারত ও মোনাজাত শেষে নুহাশ পল্লীতে স্থাপিত হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেলতলায় কেক কাটেন তার দুই ছেলে নিষিদ ও নিনিত।
এ সময় শতাধিক ভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টার দিকে প্রয়াত লেখকের দুই ভাই জাফর ইকবাল ও আহসান হাবিবসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তার কবর জিয়ারত করেন।
ফেসবুকভিত্তিক হুমায়ূনভক্ত তরুণদের দল ‘হিমু পরিবহন’ সকাল ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে হেঁটে নুহাশপল্লীর উদ্দেশে যাত্রা করবে। বিকেল সাড়ে চারটায় শিশু একাডেমি মিলনায়তনে রয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাক নাম ছিল কাজল। বাবার রাখা তার প্রথম নাম শামসুর রহমান। পরে তিনিই ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। ক্যান্সারে ভুগে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এরপর গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়।
কেন্দুয়ায় নানা আয়োজন:
লেখকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা, হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
চর্চা সাহিত্য আড্ডা ও হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি সংসদের যৌথ উদ্যোগে সকালে উপজেলা সদরে লেখকের জন্মদিনের কেক কাটা, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা ও হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের গড়া নুহাশপল্লীতে তার জন্মদিন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য,হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক। তিনি সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তার প্রতিভা দেখিয়েছেন আপন মনে। একাধারে তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। সেজন্যই তাকে বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরক দিয়েই বাংলা কথাসাহিত্যে পালাবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। এর পর শঙ্খনীল কারাগার, লীলাবতী, জোছনা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, বাদশাহ নামদারসহ দু’শোর বেশি উপন্যাস রচনা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার উপন্যাসের চরিত্র হিমু, মিসির আলী, শুভ্র বইয়ের পাতা থেকে টেলিভিশনের পর্দা কিংবা সেলুলয়েডে তরুণ-তরুণীদের আপনজন হয়ে ওঠে। ১৯৮০ সালে নাটক রচনা শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ।
তার লেখা নাটক এই সব দিনরাত্রির জনপ্রিয়তার পর তিনি তৈরি করেন বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, উড়ে যায় বকপক্ষীসহ বহু নাটক।
সিনেমা পরিচালক হিসেবেও তার ছিলো প্রচুর সুনাম। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’। এই সিনেমার জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। একই বছর তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। এরপর তিনিও নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’ এবং আমার আছে জলসহ বহু চলচ্চিত্র। তার নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।