...
সোমবার, মে ২০, ২০২৪

ইন্টারনেট নিয়ে এই নতুন সিদ্ধান্ত গ্রাহকের ওপর কী প্রভাব ফেলবে

যা যা মিস করেছেন

ক্যাশ বসানোর সুবিধা হলো, মানুষের কাছে জনপ্রিয় কনটেন্ট বা আধেয়র বিপরীতে বেশি গতিতে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যায়। কারণ, এই আধেয়র বিপরীতে ব্যান্ডউইডথ স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারে জমা থাকে। বারবার ব্যান্ডউইডথ পরিবহন করতে হয় না বলে ইন্টারনেট সেবাদাতার খরচও কম থাকে।

বিটিআরসি গত ১ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনায় জানায়, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইইজি) ও ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (নিক্স), মোবাইল অপারেটর নেটওয়ার্ক এবং নেশনওয়াইড আইএসপি (যারা সারা দেশে সেবা দেয়) কমিশনের অনুমতি নিয়ে ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করতে পারবে। স্থানীয় পর্যায়ে আইএসপিদের ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিতে হবে। এ জন্য সময় ছিল গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত। পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। অবশ্য ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট নেটফ্লিক্সের ক্যাশ সার্ভার নিক্স অপারেটর প্রান্তে স্থাপনের অনুমতি বহাল রয়েছে।

বিটিআরসির নির্দেশনায় একই সময়ের মধ্যে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইএসপিদের ব্যান্ডউইডথ দিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পপ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) বসানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে সহজে ব্যান্ডউইডথ দেওয়া যাবে।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১২৯টি লাইসেন্সধারী নেশনওয়াইড আইএসপি এবং ৩৬টি আইআইজি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে বহু স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতা রয়েছে। ক্যাশ সার্ভার থাকা স্থানীয় আইএসপির সংখ্যা ৪০০–এর বেশি হবে।

ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি সূত্র জানায়, স্থানীয় আইএসপি পর্যায়ে সার্ভার সরানোর কাজটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক বা সিডিএনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিভাইস দিয়েছে এবং সরানোর কাজ দ্রুতগতিতে করছে। কিন্তু গুগলের ডিভাইস পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমান সার্ভার সচল রেখে যদি ক্যাশ সার্ভার হস্তান্তর করা হয়, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।

আইএসপিএবির সভাপতি মো. ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরও কিছুদিন সময় দিলে ভালো হতো। বৃহত্তর স্বার্থে সরকার যেহেতু নিরাপত্তার কারণে স্থানীয় আইএসপিদের ক্যাশ সার্ভার বন্ধের কথা বলেছে, সেখানে তো আর কথা থাকে না। আইএসপিএবি থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন রেখে কাজটা যেন সম্পন্ন করা যায়। অনেকটা হয়েছে। তবে আরও সময় লাগবে।’

‘ব্যয় বেড়েছে’

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহের এক স্থানীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বরেই নিজের ক্যাশ সার্ভার বিটিআরসির কাছে জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ক্যাশ সরিয়ে ফেলার পর এখন তাদের বাড়তি ব্যান্ডউইডথ কিনতে হচ্ছে। মাসিক খরচ দ্বিগুণের বেশি হচ্ছে।

এই প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যখন গুগল তার ট্রাফিকগুলো বন্ধ করা শুরু করবে, তখন আইআইজি, নিক্স, নেশনওয়াইড আইএসপির কাছে স্থানীয় আইএসপিগুলো বাড়তি ব্যান্ডউইডথ চাওয়া শুরু করবে। আর তখনই বোঝা যাবে, দেশে কী পরিমাণে সার্ভারের চাহিদা আছে। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী যদি ব্যান্ডউইডথ না দেওয়া যায়, তখন গ্রাহক ভোগন্তিতে পড়বেন। তবে এই ভোগান্তি হবে ছোট শহরে। বড় শহরে এটা বোঝা যাবে না। অবস্থা কী দাঁড়ায়, তা পরিষ্কার হবে ৩১ ডিসেম্বরের পর।

আইএসপিএবি বলছে, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাশ সার্ভার স্থানীয় আইএসপি থেকে সরে গেলে পরিচালন ব্যয় বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সক্ষমতাভেদে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে পারে। সেবাদাতা ব্যয় সংকোচন করতে গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের পর্যাপ্ত গতি পেতে সমস্যা হতে পারে। তবে গ্রাহক বাড়লে ব্যয়ের ক্ষতি হয়তো পোষানো যাবে।

আইএসপিরা বলছে, যেসব সার্ভার আইএসপিরা ব্যবহার করছে, সেগুলো বন্ধ না করে যদি আইইজি, নিক্স বা নেশনওয়াইড আইএসপির কাছে হস্তান্তর করা যায়, তাহলে সমস্যা হবে না। কিন্তু সেই অনুমোদন নেই।

দেশে কী পরিমাণে সার্ভারের চাহিদা ও কত প্রতিষ্ঠানের হাতে ক্যাশ সার্ভার আছে, তার সঠিক কোনো তালিকা নেই। আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, যেসব আইএসপি আইনগতভাবে সার্ভার আমদানি করেছে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। এখন কতজনের সার্ভার বন্ধ হবে, সেই হিসাব নেই।

বিটিআরসির এই সিদ্ধান্ত কেন

বিটিআরসি ক্যাশ সার্ভার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের শৃঙ্খলা, জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও গ্রাহকসংখ্যা পর্যবেক্ষণের যুক্তি তুলে ধরে।

ক্যাশ সার্ভার স্থানীয় পর্যায়ে যেভাবে চলে গেছে, তাতে নিরাপত্তার বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আপত্তি উঠেছে। এসব সার্ভার থেকে অনলাইনে ধ্বংসাত্মক গেম ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ুক, সেটা বিটিআরসি চায় না। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার্ভার হস্তান্তর করা যায় কি না, তা দেখা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গুগল বা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই কোনো আধেয় (কনটেন্ট) নিয়ে সরকারের আপত্তি থাকলেও তা চাইলেই বাংলাদেশে প্রচার বন্ধ করা যাবে না। তাই ক্যাশ সার্ভার যেখানেই থাকুক, তার সঙ্গে নিরাপত্তার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.