দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি।
শুক্রবার ঢাকার নয়া পল্টনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। যাতে করে দেশে বা বিদেশে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত হয়। তার জামিন হয়ে গেছে। এখন তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অবিলম্বে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য যেতে দেওয়া। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এর জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে, অবিলম্বে খালেদা জিয়ার প্রাপ্য জামিন দিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া। চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। কারণ খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন নন, এই দেশের ষোল কোটি মানুষের, গণতন্ত্রের, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। অবিলম্বে আমাদের নেতা খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন ইতোমধ্যে তিনি যে চিকিৎসাগুলো নিয়েছেন সবই প্রায় বিদেশে। সেটার ফলোআপ করাটা অত্যন্ত জরুরি। যে পরিবেশে তাকে রাখা হয়েছে সেটা তার প্রাপ্য নয় এবং এতে করে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এই সরকারের অধীনে খালেদা জিয়া নিরাপদ নন। এইভাবে কারারুদ্ধ অবস্থায় তার অসুস্থ হওয়াটাও কোনও মতেই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারি না। আমরা আশঙ্কা করছি, অন্যান্য স্বৈরাচাররা যেভাবে প্রতিপক্ষ অপসারণ করার চেষ্টা করে, সেই ধরনের অপসারণের চেষ্টা এখানে হতে পারে।’ খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
উপস্থিত প্রতিবেদকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবেই বলেছি, তাকে মুক্তি দিতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা তিনি ভেবে দেখবেন। দেশেও করতে পারেন, দেশের বাইরেও করতে পারেন।’
মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করেই গত পরশু সবাই জানলাম, আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে মামলায় হাজিরা দিতে কোর্টে উপস্থিত হতে পারবেন না। এটা কারা কর্তৃপক্ষ কোর্টকে জানিয়েছে। আমরা এই সংবাদে উদ্বিগ্ন হয়েছি। দুঃখজনকভাবে এর বেশি কোনও ব্যাখ্যা আমরা কারা কর্তৃপক্ষ বা সরকারের কাছ থেকে পাইনি। গতকাল আমার সঙ্গে তার দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার একটি মেডিক্যাল টিম, ব্যক্তিগত টিম, তাদেরও দেখা করার কথা ছিল। তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় চিঠিও দিয়েছিলেন। আমি যখন গতকাল দেড়টার দিকে রওয়ানা হবো, সেই সময় আমাদের চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার আমাকে জানান, সাক্ষাৎকারটিকে স্থগিত করা হয়েছে। কারণ তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমরা জানতে চাইলাম- তিনি কী ধরনের অসুস্থ হয়েছেন? দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন সংবাদই পাইনি।’
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, ‘তাকে একটি পরিত্যক্ত, জীর্ণ স্যাঁতস্যাঁতে ভবনে আটকে রাখা হয়েছে। নির্জন, সেখানে অন্য কোনও বন্দি নেই। তার প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যবোধ নেই। প্রথম তিনদিন তাকে কোনও ডিভিশন দেওয়া হয় নাই। এখন যে তাকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে, সেখানেও যতটুকু প্রাপ্য, তিনি সেটা পাচ্ছেন কিনা আমরা তা জানি না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্র দুর্নীতির মামলার রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছর সাজা হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন বিকাল থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তিনি।