‘এই যে মামা এই দিকে, ভর্তা আছে, ডিম ভাজি আছে…’- দুপুর হতে না হতেই এমন হাঁকডাকে সরব হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা। হরেক রকম ভর্তা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
কী নেই সেই ভর্তা উৎসবে! বাদাম ভর্তা, ইলিশ মাছ ভর্তা, রুই মাছ ভর্তা, মরিচ ভর্তা, চিকেন ভর্তা, কালো জিরা ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ডাল ভর্তা, সরিষা ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, শিম ভর্তা, লইটা শুঁটকিসহ আরও অনেক ধরনের ভর্তা খেতে পারবেন একদম টাটকা।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীর ভিড়। দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন ভর্তার স্বাদ চেখে দেখতে। ভর্তার পাশাপাশি পাওয়া যায় বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি, খাসির মাংস ও মগজ, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, পুঁটি মাছ, চাপিলা মাছ, শিং মাছ, বেলে মাছ, কাতলা মাছ, পাঙ্গাস মাছ, কালি বাউস মাছ, গজার মাছ ও তেলাপিয়া মাছ।
বটতলার দোকানগুলোর নামও বাহারি। এসব নাম দেশের বড় হোটেল ও রেস্টুরেন্টের নামকেও হার মানাবে। যেমন ‘খালার দোকান’, ‘কেএফসি (কাদের ফুড সেন্টার)’, ‘রাবেয়া ভাত ঘর’, ‘রাফি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ ইত্যাদি। খাবার পরিবেশনেও রয়েছে ভিন্ন আমেজ, যা খাবারের রুচিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। দোকানের সামনে বিভিন্ন আকৃতির প্লেটে সাজিয়ে রাখা হয় খাবার। যার যা পছন্দ খেতে পারেন।
জানতে চেয়েছিলাম, কত রকমের খাবার তৈরি হয়। সুজন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সুজনের কাছে জানান, ছুটির দিনে অন্যান্য দিনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি খাবার রান্না করা হয়। প্রায় ৪০ ধরনের আইটেম থাকে ছুটির দিন! আর সাধারণ দিনে প্রায় ৩০ রকমের খাবার তৈরি হয়।
.নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী এসেছিলেন জাহাঙ্গীরনগরের বটতলার ঐতিহ্যবাহী ভর্তা খেতে। তিনি জানান, অনেক প্রশংসা শুনেই তাই বন্ধুরা সবাই মিলে এসেছেন এখানে। সাভার থেকে আসা এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সপ্তাহে বেশ কয়েকবার এখানে এসে ভর্তা কিনে নিয়ে যান তিনি। ক্যাম্পাসের আবাসিক ছাত্র ছাত্রীরা হলের ক্যান্টিনের পাশাপাশি প্রায়ই খাবার খেতে আসেন এ বটতলায়। ‘আমরা প্রায় তিনবেলাই এখানে খেতে আসি’- বলছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র।
শিক্ষার্থীদের কাছে এই বটতলার খাবার মায়ের হাতের রান্নার মতো। হলের ডাইনিংয়ে আয়নার মতো স্বচ্ছ ডাল আর ছোট্ট এক টুকরা মাছ বা মাংসের একঘেয়েমী দূর করার একমাত্র উপায় হলো বটতলা। বটতলা সবচেয়ে জমজমাট থাকে সন্ধ্যাবেলা। বটতলার ঠিক যেখানে বটগাছ, এর আশপাশে খাবারের দোকানের পাশাপাশি কয়েকটি চায়ের দোকানও রয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায় এসব দোকানে বসে তরুণ-তরুণীদের জম্পেস আড্ডা।গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে বটতলা। গিটার হাতে কেউ শুরু করে সুরেলা কণ্ঠের গান। সেই গানে কণ্ঠ মেলায় সহপাঠী বন্ধুরা। কেউ রাজনীতির নানান আলোচনায় ব্যস্ত। আবার কেউ ব্যস্ত মনের মানুষকে নিয়ে। সব মিলিয়ে বটতলা যেন এক মিলন মেলা। সময় করে একদিন আপনিও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন ভর্তার রাজ্য থেকে!