...
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

নেইমারের হাত দিয়েই ব্রাজিলের স্বপ্নপূরণ

যা যা মিস করেছেন

নেইমার গোল করতে পারলেই ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে চির–আক্ষেপ হয়ে থাকা অলিম্পিকের সোনা। ‘চাপ’ কাকে বলে, নেইমারের কাছে জেনে সেই সংজ্ঞাটা নতুন করে লেখা উচিত।

neimar won olympics the mail bd
সেই চাপ জয় করে নেইমার গোল করলেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের রাজকুমারের পায়েই ঘুচল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে যাওয়া সেই আক্ষেপ। অলিম্পিক ফুটবলের সোনা ব্রাজিলের। মারাকানা তখন ফেটে পড়েছে উল্লাসে। কোনো ফুটবল ম্যাচে গ্যালারি থেকে এমন গর্জন উঠতে পারে, আজ মারাকানায় না থাকলে কখনো তা বিশ্বাস করতাম না। ম্যাচজুড়েই তা উঠেছে। নেইমারের শট জালে জড়াতেই যা হলো, সেটি রীতিমতো শব্দ-বিস্ফোরণ!
নেইমার তখন শুয়ে পড়েছেন মাঠে। চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনাল শেষ হওয়ার পর ওয়েম্বলিতেও শুয়ে পড়েছিলেন। সেই নেইমার ছিলেন পরাজিত সৈনিক। এদিন তিনি বিজয়ী সেনাপতি।

রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তায় ঠাসা মহাকাব্যিক ১২০ মিনিটের ম্যাচ শেষে স্কোর ১-১। ম্যাচে ব্রাজিলের গোলটিও নেইমারের। ম্যাচের ২৭ মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিক থেকে। মারাকানা তখন উল্লাসে মাতাল। সেটিতেই অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে এল দ্বিতীয়ার্ধে জার্মান অধিনায়ক ম্যাক্সিমিলান মেয়ার ১-১ করে ফেলার পর।

‘মারাকানাজো’ ফিরে আসার শঙ্কা যে তখন ঘিরে ধরেছে ব্রাজিলিয়ানদের। ১৯৫০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচেও তো ব্রাজিল এগিয়ে গিয়েছিল প্রথমে। তারপর উরুগুয়ের সমতাসূচক গোল। খেলা শেষ হওয়ার ১১ মিনিট বাকি থাকতে গিঘিয়ার ওই মরণশেল।
আবারও কি ডুবে যেতে হবে অমন বিষাদসিন্ধুতে! প্রেস ট্রিবিউনে পাশে বসা ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকও তখন নখ কামড়াচ্ছেন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মতো অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচে আধিপত্য বলতে যা বোঝায়, তা ছিল ব্রাজিলেরই। তবে এটাও তো সত্যি যে প্রথমার্ধেই তিন-তিনবার ব্রাজিলের পোস্টে বল লাগিয়েছে জার্মানরা।
ফাইনালের আগে জার্মানির কোচ বলছিলেন, তাঁর দলের তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। ৮০ হাজার দর্শকের সামনে মারাকানায় খেলা বলে কথা! তা অভিজ্ঞতা একটা হলো বটে, জার্মানরা তো ৮০ হাজার দর্শকের সামনে খেললেন না, খেললেন তাঁদের বিপক্ষে। মাঠের ১১ জনের চেয়েও যেটি কখনো কখনো বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছিল।
গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের ব্যঙ্গাত্মক গানের জবাবে ব্রাজিলিয়ানরাও পেলে-ম্যারাডোনাকে নিয়ে একটা গান বেঁধেছিল। গানের কথাগুলো মোটামুটি এ রকম—‘এক হাজার গোল/ এক হাজার গোল/ শুধুই পেলের/ ম্যারাডোনা তো কোকেন নেয়।’ ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা এই ম্যাচে নেই। তারপরও মারাকানামুখী জনতার মুখে ওই গান। ম্যাচের আগে, ম্যাচের সময়ও ওই গানেই মুখরিত স্টেডিয়াম। আর একটু পরপর ‘ব্রাজিল’ ‘ব্রাজিল’ গগনবিদারী চিৎকার।

জার্মানি সমতা এনে ফেলার পর অবশ্য ওই দর্শকের পেলে-ম্যারাডোনাকে নিয়ে ভাবার মতো অবস্থা ছিল না। তখন শুধুই ‘ব্রাজিল-ব্রাজিল’ চিৎকারে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ফেলা। অতিরিক্ত সময়ে শুরু হলো নতুন ‘খেলা’। জার্মানদের পায়ে বল গেলেই গ্যালারি থেকে উঠল শিসের শব্দ! সেটি এমনই তীব্র যে রীতিমতো কানে লাগছিল।

টাইব্রেকারে জার্মানদের শট নেওয়ার সময় তা আরও তীব্র। চাপ এই ম্যাচে কোনো দলের জন্যই কম ছিল না। ব্রাজিলের ওপর ছিল ফুটবলপাগল পুরো দেশের প্রত্যাশা মেটানোর চাপ। জার্মানির জন্য গর্জনশীল মারাকানা। কে আগে সেই চাপে ভাঙে, টাইব্রেকারটা যেন ছিল তারই পরীক্ষা। যেটিতে শেষ পর্যন্ত ভাঙলেন নিলস পিটারসেন। ওয়েভারটন অবশ্য বলতে পারেন, আমার কৃতিত্ব কেড়ে নিচ্ছেন কেন, পিটারসেনের শটটা তো আমিই ঠেকালাম!
উবু হয়ে দাঁড়িয়ে টাইপ করতে করতে এই লেখা যখন শেষ করছি, নেইমারের ব্রাজিল তখন সোনার পদক গলায় বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে। বাজছে ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত। নেইমারদের সঙ্গে যেটি গাইছে পুরো স্টেডিয়াম। অনেকের চোখেই জল দেখতে পাচ্ছি। এত দিনের দুঃখ ভোলার কান্না।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.