নতুন যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো তাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি।
কাউন্সিলে কমিটি গঠনের একক দায়িত্ব চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেই দেয়া হয়েছে। জানা যায়, এই দুই পদের বিপরীতে ৪ জনের নাম প্রস্তাব আকারে এসেছে।
সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে ১৯ সদস্যের মধ্যে যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাতে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আর কোনো নারী সদস্য নেই।
বিএনপি সূত্র জানায়, সদ্য বিলুপ্ত স্থায়ী কমিটির নারী সদস্য সারোয়ারি রহমানকে বার্ধক্যজনিত কারণে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির নারী সদস্য হিসেবে শিরিন সুলতানা এবং একজন শিক্ষাবিদের নাম আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত চেয়ারপারসন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেননি।
খালেদা জিয়ার একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যৎ রাজনীতির কথা চিন্তা করে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকেই স্থায়ী কমিটিতে নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চেয়ারপারসন। কৌশলগত কারণে এখনই নামটি ঘোষণা করা হয়নি।
তবে আরেকটি পদে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং সাদেক হোসেন খোকাকে নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন খালেদা জিয়া।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। তবে তিনি এও বলেছেন, ম্যাডাম যেটা ভালো মনে করছেন সেটা করছেন। ব্যক্তিগত কোনো প্রতিক্রিয়া আমার নেই।
স্থায়ী কমিটিতে জোবাইদা রহমান যুক্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু জানি না।’
উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শনিবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যান, সম্পাদক মণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণার পর দেখা যায়, দলের পদে থাকা নেতাদের পরিবারের ডজনের বেশি নানা পদ পেয়েছেন।
এত বড় কমিটি কেন- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “বিগত দিনগুলোতে বিএনপি যে বিকাশ লাভ করেছে, বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, ছাত্রদল-যুবদল থেকে যারা আসছেন, তাদেরকে তৈরি করার জন্য নতুন কমিটিতে আনতে হয়েছে।”
ফখরুলের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমিন নতুন কমিটিতে সদস্য হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।
ফখরুলের ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তাদের পরিবারের আরেকজন এবার কমিটিতে পদ পেলেন।
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদেরের ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি তারেক রহমানের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক করেছেন খালেদা জিয়া। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী স্বামীর প্রচারে নেমে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি।
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন বাফুফের সহসভাপতি তাবিথ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়কে প্রান্তিক ও জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক করেছেন খালেদা জিয়া।
গয়েশ্বরের পুত্রবধূ নিপুন রায় চৌধুরীও পদ পেয়েছেন, তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। নিপুন ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে।
বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাকে কার্যনির্বাহী সদস্য করেছেন খালেদা জিয়া।
ভারতে বিচারের মুখোমুখি থাকার মধ্যেও স্থায়ী কমিটিতে আসা সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদকেও রাখা হয়েছে নির্বাহী সদস্য হিসেবে।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে নিজের উপদেষ্টা পরিষদে আরও ৭২ জনের সঙ্গে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী সাহিদা রফিক উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন।
সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সঙ্গে তার মেয়ে আফরোজা খান রীতাও উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন। রীতা আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের শ্যালিকা।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নানের মেয়ের জামাই।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম খান অসুস্থতার কারণে স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়লেও তার ছেলে মইনুল ইসলাম শান্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়েছেন।
সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ সহ-তাঁতি বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
সাবেক গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু নির্বাহী সদস্য হয়েছেন।
২০ দলীয় জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) এর প্রয়াত সভাপতি অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহানাকে সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক করেছেন খালেদা।