প্রিয় মানুষের সঙ্গে অফুরন্ত সময় বাসায় কাটানোর বিষয়টি স্বপ্নের মতো। এমন একটি চমৎকার জীবন কেই বা না চায়। কিন্তু একসঙ্গে খুব বেশি সময় অতিবাহিত করা, বিশেষ করে কোনো চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে, যেকোনো সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
ফলে করোনা ভাইরাসের আরো একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া স্বরূপ দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।
যেমন চীনের কথাই ধরা যাক। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত মাসে দেশটি প্রত্যক্ষ করেছে সর্বোচ্চ বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। আর তুরস্কের দিকে তাকালেও ঠিক একই ধরনের চিত্র ফুটে উঠে। ডিভোর্স আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী, লকডাউনের পর থেকে দেশটিতে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবাইয়েও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এই আশংঙ্কাজনক মতানৈক্যের কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি উদ্বেগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের কেউ না কেউ হচ্ছেন চাকরিহারা আর পাশাপাশি রয়েছে সংসার চালানো এবং সন্তানদের দেখাশোনার ভার। সবকিছু মিলে নাগরিক জীবনে জমে উঠছে মান-অভিমান এবং মতানৈক্যের দ্বৈরথ। আর তারই ফলাফলস্বরূপ বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের হার!
২৪ ঘণ্টাই একসঙ্গে থাকলে দম্পতিদের মধ্যে ছোটখাটো মতানৈক্যে হতেই পারে। কিন্তু ছোটখাটো মতানৈক্যে আর বিবাহবিচ্ছেদের আলোচনার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। করোনার প্রভাব অন্যান্য আরো অনেক কিছুর মতো এই বিষয়টিকেও করে দিচ্ছে ওলটপালট। নিউ ইয়র্ক শহরের ডিভোর্স আইনজীবী টড এ. স্পডেক বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, বিবাহবিচ্ছেদের বড় একটি ঢেউ আসবে।’ কেননা বিগত কয়েকদিন ধরেই তিনি প্রচুর কল পাচ্ছেন। যে ফোন কলগুলোর সবগুলোই ছিল দাম্পত্য কলহভিত্তিক। তার মতে, কর্মব্যস্ত জীবনে কলহগুলো মানুষ ভুলে যায়, তবে যেহেতু এখন সার্বক্ষণিক একে অপরের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে তাই বিরূপ মনোভাব তো কমছেই না বরং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে এই অমানিশাতেও অনেকেই দেখাচ্ছেন আশার আলো। বেশ কয়েকটি সংস্থার মতে, ইতোপূর্বে যে সম্পর্কগুলোতে বিচ্ছেদের সুর বইছিল, সেই সম্পর্কগুলো এখন দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটানোর ফলে পুনরায় জোড়া লেগে যাচ্ছে। আর তাই অনেকেই আগে ডিভোর্স কেস ফাইল করলেও, এখন সেগুলো তুলে নেয়ার জন্য প্রায়শই কল করছেন।
আর তাই এমন একটি পরিস্থিতিতে সবার উচিত নিজেদের কলহগুলোকে আরেকটি বার সুযোগ দিয়ে সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর সাথে আরেকটু অন্তরঙ্গ সময় অতিবাহিত করা। ছোটখাটো উচ্ছ্বাস এবং আবেগগুলোকে আঁকড়ে ধরে একে অপরের মধ্যে বিবাদ না খুঁজে বরং সুখ খুঁজে নেয়া। আর অপেক্ষা করা, কেননা মেঘের কালো ছায়া একদিন সরে যাবেই। নতুন ভোর করোনা আতঙ্ক ধুয়ে মুছে নাগরিক জীবনের দাম্পত্যগুলোকে দিবে নতুন রূপ!