বৃহস্পতিবার, মে ২৩, ২০২৪

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক -প্রফেসর মোঃ ইউনুস আলী সিদ্দিকী

যা যা মিস করেছেন

আমরা চতুর্থর্ শিল্প বিপ্লবের যুগসন্ধিক্ষণের বৈশ্বিক নাগরিক। বিগত তিনটি শিল্প বিপ্লবের প্রভাব পৃথিবীবাসীর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরাজমান। মানুষ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিজয়ের দিকে দ্রুতবেগে ধাবমান। ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা ম্যানেজমেন্ট তথা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ন্যানো টেকনোলোজি ইত্যাদির মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে ভবিষ্যৎ বিশ্ব হবে স্মার্ট বিশ্ব। এই স্মার্ট বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কোন বিকল্প নেই। দেশের দীর্ঘমেয়াদী সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে বহুমাতৃক কর্মপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে সরকার। এই বাস্তবতায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিজয়ের লক্ষ্যে সরকারের মিশন হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য সরকার ইতোমধ্যেই চারটি ভিত্তি ঠিক করেছে। এগুলো হলো: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনোমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত রূপকল্প-২০৪১ ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি) এর ব্লেনডেড রূপ হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। এই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার এরই মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি(জাইকা)-এর সহযোগিতায় একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা, উদ্ভাবনী জাতিগঠন এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণ এই তিনটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আর এই স্মার্ট প্ল্যানটি প্রণীত হয়েছে। বিশ্ব বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে জাইকার সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির চারটি উপাদান যেমন: শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবস্থাপনা ও সৃজনশীলতাকে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের এই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ‘সোনার বাংলা’ তথা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাঙালি জাতিকে সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করার জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সারাজীবন নির্যাতন ভোগ করেছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নেরই প্রতিফলন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তৈরিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের এই মিশন বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের সরকারি ও বেসরকারি হাজারো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কার্যকর ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মার্ট বাংলাদেশ নিছক কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নয়। এটিকে এদেশের ১৮ কোটি মানুষের ধ্যানজ্ঞান ও চিন্তাভাবনার কেন্দ্রন্দিুতে পরিণত করা উচিত। আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, এই কর্মজজ্ঞের সফলতার জন্য সবথেকে কার্যকর ভূমিকা রাখবে দেশের শিক্ষাখাত তথা সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ। দেশের অগ্রগতিতে প্রণীত যে কোন ধরণের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে শিক্ষকগণকেই অন্যতম প্রধান কারিগরের ভূমিকায় থাকতে হয়। তবে, এই স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে সবার আগে শিক্ষা ও

শিক্ষককে স্মার্ট হতে হবে। সরকার এজন্য শিক্ষকবান্ধব বিভিন্ন ধরণের কার্যকরী নীতিমালাও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক আইসিটি ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরি করা হয়েছে এবং শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। স্মার্ট বোর্ড এর ব্যবহার চালু করা হয়েছে। শ্রেনিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ও স্মার্ট বোর্ড এর ব্যবহারকে ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিজ্ঞান প্রসারের জন্য নতুন নতুন কোর্স প্রবর্তন করা হচ্ছে। গবেষণা খাতে বিশেষ গুরুত্বারোপের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা উন্নত দেশের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে যা শিক্ষার্থীদেরকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করবে। আমরা যারা শিক্ষক তাঁরা চাইলে উপরোক্ত সকল কার্যক্রমগুলোকে সর্বাধিক কার্যকর করে তুলতে পারি। মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, “যিনি সৎ, তিনি স্মার্ট। যিনি অসাম্প্রদায়িক, তিনি স্মার্ট। যিনি সহমর্মী তিনি স্মার্ট, যিনি কর্মদক্ষ তিনি স্মার্ট। তাই দক্ষ, যোগ্য ও সৃজনশীল মানুষই হবে আমাদের স্মার্ট নাগরিক। কাজেই এই স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের স্মার্টর্ হতে হবে। আর সেই শিক্ষকেরাই হবেন আমাদের স্মার্ট নাগরিক তৈরি করার মূল হাতিয়ার।”

প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্মার্ট হিসেবে তৈরি করতে শিক্ষকরা সবথেকে কার্যকর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে তারা নতুন নতুন জ্ঞান বিতরণ করেন, তারা স্বপ্ন দেখাতে পারেন। পাঠ্যবইয়ের বাহিরেও সত্য, ন্যায়-অন্যায় ও সুশাসনের বিষয়ে শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব রয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডয়া প্রজেক্টর দেওয়া হয়েছে। এই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে। ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করতে শিক্ষকদের আরো আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষকদের এই আগ্রহের কারণেই একটি জাতি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা পাবে। ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে পুরো বিশ্ব ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। শিক্ষকদের কম্পিউটার, ল্যাপটপের ব্যবহার জানতে হবে ও বেশি বেশি ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক যত দক্ষ হবেন আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়াতে তত আগ্রহ জন্মাবে। তাই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আসুন, আমরা দেশ, মাটি ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীদার হই।

*লেখক: অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও অধ্যক্ষ, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ, ঝালকাঠি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security