বৃহস্পতিবার, মে ২৩, ২০২৪

এইচএসসিতে ফলাফল ভালো, তবুও মেধাবী দেলোয়ারের ভর্তিতে অনিশ্চিয়তা

যা যা মিস করেছেন

হতদরিদ্র বাবা-মায়ের সাথে জরাজীর্ণ ঘরের সামনে মেধাবী ছাত্র দেলোয়ার হোসাইন দাঁড়িয়ে।
শুধুমাত্র অর্থাভাবে এক রিক্সাচালক ও প্রতিবন্ধী দম্পতির মেধাবী ছেলের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেধাবী এ শিক্ষার্থীর নাম দেলোয়ার হোসেন। দেলোয়ার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউপির রঘুনাথপুর গ্রামের রিক্সাচালক কনু মিয়া ও শারীরিক প্রতিবন্ধী দিলারা বেগমের একমাত্র ছেলে সন্তান। দেলোয়ার এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ থেকে ব্যানিজ্য শাখা থেকে ৪.০৮ পেয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন এর বাবা কনু মিয়া রিক্সাচালিয়ে ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মা আর ছোট বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনভাবে জীবন নামের গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছন। ছোট বোন ফারজানা আক্তার ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। তাদের থাকার জন্য নিজের কোন বসতঘর নেই। মামার ঘরে থেকেই চলছে সংসার জীবন-যাপন। দেলোয়ার শ্রীমঙ্গল শহরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি দোকানে অস্থায়ীভাবে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে কোন রকম এইচএসএসি পরীক্ষা দিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী মা দিলারা বেগমও অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না নিজের। এমন সঙ্কটে স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা অর্থের অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেধাবী দেলোয়ারের পড়াশোনা তার থেকে বড় ভর্তি হওয়া। এইচএসসি’তে ভালো ফলাফল হলেও অনার্সের জন্য ভর্তি হতে পারবে কি না তা নিশ্চিত নয়। টাকার ব্যবস্থা না হলে হয়তো এখানেই থেমে যাবে দেলোয়ারের স্বপ্ন পূরণের আশা।
অদ্য বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে অদম্য মেধাবী দেলোয়ার হোসেন এর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা কনু মিয়া রিক্সা নিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একমাত্র ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে করে উত্তীর্ণ হওয়ায় চোঁখে মুখে হাঁসি থাকলেও দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ছেলের ভর্তির টাকা নিয়ে। কিভাবে জোগার করবেন ছেলের ভর্তির টাকা। নিজের ভিটে-বাড়ি, জমিজমাও নাই যে বিক্রি করবেন।
বাবা কনু মিয়া জানায়, ছেলেটা ছোট থেকেই মেধাবী খুব ভালো পড়ালেখায়। যার কারণে ওর লেখাপড়ায় কোন ভাটা পড়ুক তা চাইনি কোনদিন। কষ্ট করেই পড়িয়ে যাচ্ছি। এখন যে কিভাবে তার ভর্তির টাকা জোগাড় করবো কোন কূল-কিনারা পাচ্ছি না। যদি কেউ সহযোগিতায় আসতেন, তাহলে ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হতো।
মেধাবী দেলোয়ার জানায়, “ছোটবেলা থেকে পুলিশ অফিসার হবে এই সপ্ন ছেলেটার। স্বপ্ন পূরণের আশায় একবুক আশা নিয়ে লালন করে নানান বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে এসেছি। আমার খুবই ইচ্ছে পুলিশ অফিসার হব। কঠিন দারিদ্রতার মধ্য দিয়েই আমার বেড়ে উঠা। এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০৮ অর্জন করি। এসএসসি পাস করার প্রতিদিন বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দুরে কলেজে যেতে লাগতো বেশ গাড়ি ভাড়া। মেসে থাকার সামর্থ্য না থাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় তাদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়িয়ে কলেজে ক্লাস করতাম। সেখান থেকেই শ্রীমঙ্গল শহরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে পার্ট টাইম কাজ করে কোন রকমে কলেজের বেতন যোগাড় করেছি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দুইবার পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দেই। কিন্তু প্র্যাকটিকেল সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও চাকুরী হয়নি। এখান থেকেই স্বপ্ন তৈরি হয় পুলিশ বিভাগে কাজ করার। সেবার মানসিকতা নিয়েই বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কাজ করতে চাই। এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তির টাকার সংকটে রয়েছে, জানি না টাকা কিভাবে জোগাড় হবে?
দেলোয়ার হোসেনের মা দিলারা বেগম বলেন, ছেলেটাকে তেমন কিছু দিতে পারিনি। আমি দীর্ঘ ৭/৮ বছর যাবত পঙ্গু হয়ে পড়েছি। দৈনিক ৪/৫শত টাকার ঔষধ লাগে। স্বামী রিক্সা চালিয়ে যা পান তা দিয়ে আমাদের আর চলে না। তাই ছেলেটাকে ভালো কিছু দিতে পারি না। এখন তাকে ভর্তি হতে অনেক টাকা দরকার। কিভাবে টাকা জোগাড় করবো জানি না। তাই তিনি সমাজের বিত্তবান ও সরকারের কাছে ছেলের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করছেন। অনেক মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্বেও তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুদ্ধে হয়তো পরাজিত হতে পারে বলে জানান দেলোয়ারের মা।
ভরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, ছেলেটা এতো মেধাবী যে বাড়িতে তার লেখাপড়ার মতো পরিবেশ নাই। তারপরেও আমার বাড়িতে এনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ছেলেটিকে সহযোগিতা করতে পারলে সে অনেক ভালো করবে ভবিষ্যতে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুদ আলী বলেন, দেলোয়ার অদম্য মেধাবী ছেলে। আমি নিজেও একাধিকবার সাহায্য সহযোগিতা করেছি দেলোয়ারের পরিবারকে। এখন ভর্তিসহ লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। সমাজের বিত্তশালীদের তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনিও। একটু সহযোগিতা পারে এই পরিবারটির অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসতে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security