আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের বিস্তারিত জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে রয়েছে গভীর তাৎপর্য। এই ভাষণ সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করে। তিনি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নারীকেআন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে নারী সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী-অধিকার রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা সৃষ্টির জন্য দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাম চন্দ্র দাস, অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদ ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা ও নেতৃত্বে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের শুরু। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন,ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০-৫০ এ উন্নীত করার অঙ্গীকার করেন। তাঁরই নির্দেশনায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শিক্ষা, চাকুরি, ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থান সকল ক্ষেত্রে নারীর আজ সফল অগ্রযাত্রা।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে পেরেছে। যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী তিন নারী নেতার একজন নির্বাচিত হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এবারের প্রতিপাদ্য, ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’ উল্লেখ করে তিনি জানান, করোনাকালে বাংলাদেশের ডাক্তার, নার্স, প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সকল পর্যায়ের নারীরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নারীরাই করোনাকে জয় করে সমতার বিশ্ব গড়ে তুলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৮ মার্চ, গণভবন থেকে সকাল ১০.৩০টায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫ জন জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। তাঁরা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর নিকট থেকে সম্মাননা গ্রহণ করবেন। তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেষ্ট ও সনদ প্রদান করা হবে।
জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের নাম ঘোষণা করে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, এ বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী বরিশাল বিভাগ থেকে বরিশাল জেলার হাছিনা বেগম নীলা; শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী হলেন রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার মিফতাহুল জান্নাত; সফল জননী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার মোসাম্মৎ হেলেন্নছা বেগম; নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলার রবিজান ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। টেলিভিশন ও রেডিওতে নারীর অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং এ বিষয়ে প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে র্যালি, সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের অসামান্য অগ্রগতি, সমতা সৃষ্টি, বৈষম্য হ্রাস,নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ে বন্ধ, সুরক্ষা, সকল ধরণের সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।