...
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

নিজেকে আন্তর্জাতিক সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর বলতেন ‌‘হেলিকপ্টার’ রুবেল

যা যা মিস করেছেন

প্রতারণার অর্থ দিয়ে সুন্দরী অভিনেত্রী-মডেলদের সঙ্গে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে রাত কাটাত ভয়ংকর প্রতারক রুবেল আহমেদ ওরফে হেলিকপ্টার রুবেল। এর বাইরে উত্তরা-১ ও ১৮ নম্বর সেক্টরে তার ভাড়া বাসায় নিয়মিত আনাগোনা ছিল সুন্দরী রমণীদের। কথিত প্রকল্পের ডকুমেন্টরি তৈরির কথা বলে এসব সুন্দরীকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াত রুবেল ও তার সহযোগীরা। তবে মূলত ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের জন্যই কয়েক দফায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার ব্যবহার করত রুবেল। নিজেকে পরিচয় দিত কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিমের আদালতে রুবেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্যই দিয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে কুষ্টিয়ার খোকসা থানায় হেলিকপ্টার রুবেলের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছেন মুজাহিদুল ইসলাম বাবুল নামের একজন। মামলায় রুবেলের কাছে তিনি ২৮ লাখ ৯১ হাজার টাকা পান বলে উল্লেখ করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপ-কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতারণায় রুবেলের কৌশল তারিফ করার মতো। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনে সে পুরোপুরি সফল ছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কুষ্টিয়া আদালতে নাকি এই চক্রের বিরুদ্ধে আরও মামলা হয়েছে, এটা আমরা জানতে পেরেছি।’

জবানবন্দিতে যা বলেছে রুবেল : 

আদালত ও তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, স্বীকারোক্তিতে লিটন বলেছে, প্রায় তিন মাস আগে মো. জাকারিয়া হোসেন ওরফে লিটনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। লিটন আর সে কানাডিয়ান সাহায্য সংস্থা সিসিআইসির (কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন) মাধ্যমে গরিব ও দুস্থ ব্যক্তিকে ঘর তৈরি, স্কুল তৈরি, বাঁধ নির্মাণ, কৃষকদের মধ্যে ডিপ টিউবওয়েল বিতরণ করার নামে প্রতারণা করার পরিকল্পনা করে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার এক ব্যক্তি (অন্যতম একজন পার্টনার) তাদের প্রকল্পের প্রোফাইল তৈরি করতে সার্বিক সহায়তা করে। ওই ব্যক্তি আইটি বিষয়ে পারদর্শী এবং অতীতে সে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছে। এ ছাড়া প্রতারণার কাজে মোবাইলে এসএমএস, কানাডিয়ান সাহায্য সংস্থার ফরম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে ফরম বের করতে সহায়তা করে। রুবেল পরবর্তী সময়ে ঢাকায় এসে পালিয়ে থাকে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রুবেল আরও বলেছে, ‘জাকারিয়া হোসেন লিটন আমাকে বাবুল আখতারের সঙ্গে সিসিআইসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি নিজেও লিটন সিসিআইসির কুষ্টিয়ায় অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে বলি। আমি বাদীকে (বাবুল আখতার, কুষ্টিয়া বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) বলি, আমার কানাডিয়ান সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে আপনার এলাকায় গরিব লোকদের ঘর তৈরি, টিউবওয়েল বিতরণ এবং নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ বাবদ আর্থিক অনুদান আনা যাবে। আমি ও লিটন বাদীকে নিয়ে খোকসা থানাধীন ৩ নম্বর বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের এলাকা পরিদর্শনপূর্বক সার্ভে করে ২০০ জন দরিদ্র্য লোকের তালিকা প্রস্তুত করি। একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং আমাদের অফিস নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করার জন্য বায়না বাবদ মালিককে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করি। এভাবে বাদীসহ সবার বিশ্বাস স্থাপন করি। আরও বিশ্বাস স্থাপনের জন্য তিনবার হেলিকপ্টার ভাড়া করে এলাকায় যাতায়াত করি। ৩ নম্বর বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নিচতলার একটি কক্ষে সিসিআইসির অফিস হিসেবে কার্যক্রম শুরু করি এবং অফিসের ব্যবহারের জন্য মুন কম্পিউটারের মালিক মাসুদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল কিনি। এলাকায় দুস্থদের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন ফরমে তাদের এনআইডি ফটোকপি এবং ছবি সংগ্রহ করি।’

রুবেলের স্বীকারোক্তির বিষয়ে আদালত সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী সময়ে রুবেল ইউপি সদস্যদের অফিস বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হয়ে জানায় যে প্রকল্প বাবদ ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা অনুদান মঞ্জুর হয়েছে। মঞ্জুরকৃত টাকা উত্তোলনের জন্য আড়াই পার্সেন্ট হারে ট্যাক্স বাবদ ৪৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় জমা দিতে হবে। এর মধ্যে বাদীর পক্ষে সবুজ ও রাজু পাঁচ কিস্তিতে ২১ লাখ টাকা এসএ পরিবহন উত্তরার মাধ্যমে এবং নগদ দেন। পরে রুবেল ও লিটন মিলে ১০ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। ঘর নির্মাণের কথা বলে মজিদ মেম্বারের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, মমিন মেম্বারের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা এবং তেল বাবুর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা তারা গ্রহণ করে।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রুবেলের কাছ থেকে যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে বাবার নাম দুই ধরনের পাওয়া গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলেও পাসপোর্টে নিজের খালুর নাম বাবার নামের জায়গায় বসিয়েছে সে। এ বিষয়ে সে যে যুক্তি দেখিয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তবে সে যে একজন ভয়ংকর মাপের ঠান্ডা মাথার প্রতারক এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পারলে আরও অনেক তথ্য আদায় করা সম্ভব হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর বিমানবন্দর থানার প্রতারণার মামলায় উত্তরা এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেফতারের পর দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রুবেল।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.