...
বুধবার, মে ১৫, ২০২৪

দীর্ঘ নীরোগ জীবন পেতে

যা যা মিস করেছেন

নীল অঞ্চলের ডায়েট
আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।

এঁরা শতবর্ষীয় সুস্থ মানুষ।

নীল অঞ্চলের ডায়েট বা ‘ব্লু জোনস ডায়েট’ আসলে কোনো ডায়েট নয়, বরং এটি একটি ডায়েট ও জীবনযাপন চর্চা, যা দীর্ঘায়ু করে মানুষকে। জ্যাম বুয়েটনার নামের একজন লেখক ব্লু জোন নামে যে বই লিখেছেন, সেটিতে তিনি পৃথিবীর পাঁচটি অঞ্চলের লোক, যাঁরা দীর্ঘায়ু ও নীরোগ, তাঁদের জীবনযাপন চর্চা লক্ষ করেছেন:

● একারিয়া, গ্রিস

● ওকিনাওয়া, জাপান

● ওগলিযাস, সাবডিনিয়া, ইতালি

● লোমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

● নিকোয়াপোনিনসুলা, কোস্টারিয়া

ব্লু জোনের অনেক মানুষ ৯০ বছর পেরিয়ে বাঁচেন, অনেকে শতবর্ষী হন। হয়তো জিনগত উপাদানের ভূমিকা থাকতে পারে, তবে তা সামান্য। তা মাত্র ২৫ শতাংশ, বাকি ৭৫ শতাংশ ডায়েট এবং জীবনযাপন চর্চা।

তাঁদের সাধারণ খাদ্যাভ্যাস।

উদ্ভিজ্জ খাবারে বেশি জোর দেওয়া হয়। ব্লু জোনের লোকজন বছরে মাত্র ১১-১৫ পাউন্ড মাংস গ্রহণ করে। আমেরিকানরা গ্রহণ করে গড়ে জনপ্রতি ২২৩ পাউন্ড। প্রধানত নিরামিষ।

শরীরের ওজন
স্থূলতা: ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। উদ্ভিজ খাবার স্থূলতা প্রতিরোধ করে দীর্ঘায়ু হওয়ার পথ কিছুটা প্রশস্ত করে। কানাডার ইপিডেমিওলনিস্ট জনগোষ্ঠীর ৬২ শতাংশের বেশি ওজন এবং ২৫ শতাংশ স্থূল।

তবে যারা উদ্ভিজ্জ খাবার খায়, তাদের স্থূলতা অনেক কম।

প্রাণিজ খাবার বেশি খেলে বডি মাস ইনডেস্ক (বিএমআই) বাড়ে, তবে উদ্ভিজ খাবার সময়ের সঙ্গে ওজন বাড়ার ঝুঁকি অনেক কমায়।

মোদ্দা কথা হলো, ব্লু জোনের লোকজন উদ্ভিজ্জ খাবার খায়, প্রতি মাসে গড়ে মাংস খায় ১ পাউন্ডের কম। উদ্ভিজ্জ খাবারে ক্যালরি অনেক কম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম, বেশি হলো আঁশ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট।

গবেষণায় দেখা গেছে, এমন খাবার খেলে ক্রনিক রোগ কম হয়।

ব্লু জোনে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন চর্চা
তবে স্বাস্থ্যের পরম তুঙ্গ পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে কেবল ডায়েট নয়, সে সঙ্গে জীবনযাপন আচরণও প্রয়োজন, দুটো মিলে নীরোগ স্বাস্থ্য পাওয়া সম্ভব। যেমন পেট যখন ৮০ শতাংশ ভরাট মনে হবে, তখন খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

ওকিনাওয়ান চর্চা: ‘হারা হা চি বু’ কনফুসিয়ান মন্ত্র: মানে পেট ৮০ শতাংশ পূর্ণ। বিশ্বের সবচেয়ে সুস্থ লোকজন পেট অস্বস্তিকরভাবে ভরাট হওয়া পর্যন্ত খায় না। বরং এদের পেট ৮০ শতাংশ ভরাট হলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে তাদের ক্যালরি গ্রহণ কম হয় এবং স্থূলতা ও স্থূলতা সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকিও কমে। তবে এটি এত সহজ নয়। মনোযোগী আহার (মাইন্ডফুল ইটিং) করলে তা সম্ভব।

● টেবিলে বসে খাবেন, অন্য সব যন্ত্র যেমন টিভি, মোবাইল ফোন, ট্যাব—সব থাকবে বন্ধ।

● সময় নিয়ে খান, ধীরে ধীরে।

● যদি নিশ্চিত না হন যে পেট ৮০ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে কি না, তখন ক্ষণিক বিরতি নিন, ধৈর্য ধরুন। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।

সবচেয়ে কম পরিমাণ খাবার গ্রহণ করুন দিনের শেষ দিকে
‘প্রাতরাশ খাবেন রাজার মতো, মধ্যাহ্ন আহার করবেন যুবরাজের মতো আর রাতের খাবার খাবেন হতদরিদ্রের মতো’।

ব্লু জোনের লোকজন এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করে। তারা তা করেই সুস্থ। রাতে ভোজন ও শোবার আগে পেট ভরে স্ন্যাকস খেলে দেখা যায় স্থূলতা, মেটাবলিক সিনড্রোম, অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা।

প্রথমে ডিনারের পর স্ন্যাকস বাদ দিন। ক্ষুধা এর সঙ্গে অভিযোজিত হলে দিনে বেশি পরিমাণ ও সন্ধ্যা রাতে কম পরিমাণ খাওয়ায় অভ্যস্ত হবেন।

সক্রিয় সচল থাকুন
ব্লু জোনের লোকজন সক্রিয় সচল বা সে অর্থে তেমন কঠোর ব্যায়াম করে। জনগোষ্ঠী সক্রিয় অচল থাকাকে জীবনধারার মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছে। এবং ড্রাইভ করার পর হাঁটে বা সাইকেল চালায় বেশি। ঘরে গেরস্থালির কাজ করতে লজ্জাবোধ করে না, কায়িক শ্রম করে, ঘরে বা বাগানে। এ জন্য তারা দীর্ঘায়ু। সার্ডিনিয়ান লোকজন পাহাড়ে ওঠে হেঁটে, সেখানে চাষবাস করে, এরা দীর্ঘায়ু। দেখা গেছে, যারা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন করে, তারা যারা প্রতিদিন হাঁটে, এদের চেয়ে অনেক কম দিন বাঁচে।

সারা দিন হাঁটুন, চলুন
নিজের ডেস্ক থেকে প্রতি ঘণ্টায় একবার উঠুন, পাঁচ মিনিট হাঁটুন, ঘরের দরজা থেকে কিছু দূরে গাড়ি পার্ক করে ঘরে আসুন, বাজারে যান হেঁটে, হেঁটে দেখা করতে যান বন্ধুর সঙ্গে।

চাপ মোকাবিলা করুন
সময়ে সময়ে সবার মানসিক চাপ হয়। ব্লু জোনের লোকজন একে মোকাবিলা করে ঈশ্বর প্রার্থনা করে, ধ্যান করে, ভাতঘুম দিয়ে। এদের প্রদাহ ও হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

যেসব কাজকর্ম মনে আনে আনন্দ ও সুখ, এগুলোর তালিকা করুন। যেমন দীর্ঘপথ হাঁটা, বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলা, উষ্ণ স্নান বা ধ্যানমগ্নতা। এসব কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার সময় খুঁজে নিন, চাপভাব হয়ে জীবনকে কষ্ট দেওয়ার আগেই।

চাপ আচ্ছন্ন করলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য ও পরামর্শ নিতে পারেন।

বন্ধুবান্ধব ও পরিবার–পরিজনের সঙ্গে সময় কাটান।

ব্লু জোনের লোকজন পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোকে অগ্রাধিকার দেয়। এভাবে হয় দীর্ঘায়ু।

শুরু হয় শৈশব থেকে।

ওকিনাওয়ার শিশুদের পাঁচজনের দলে ভাগ করে বড়রা, বলে মোয়াই। এই ছোট বন্ধুসভা শৈশব থেকে পরস্পরকে দেয় সামাজিক ও ইমোশনাল অবলম্বন, আমৃত্য। অন্যান্য ব্লু জোনে বয়স্ক ও বৃদ্ধ লোকজন তাঁদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ও অন্যান্য স্বজনের সঙ্গে একত্রে বসবাস করেন।

৩৪ বছর দীর্ঘ এক গবেষণায় দেখা গেছে একাকিত্ব ও সমাজবিচ্ছিন্ন মৃত্যু ত্বরান্বিত করে।

যত ব্যস্তই থাকুন, সামাজিকতা করুন, বন্ধু স্বজনদের নিয়ে থাকুন। সামাজিক বলয় বড় করুন।

উদ্দেশ্য–লক্ষ্য উপলব্ধি করুন। জীবনের লক্ষ্য–উদ্দেশ্য বুঝুন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কী করবেন?

ওকিনায়ার লোকজন বলে, ‘আইকিগাই’ নিকোয়া পোনিগুলোতে বলে ‘চাপ্লান ডা ভাইডা’। ইংরেজিতে ‘পারপাস’।

এটি স্থির থাকলে দীর্ঘায়ু লাভ হবে।

জীবনের সুস্থ লক্ষ্য–উদ্দেশ্য থাকলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। দেখা গেছে মেটাঅ্যানালিসিসে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.