...
মঙ্গলবার, জুলাই ১৬, ২০২৪

যশোরে মেলার নামে চলছে সর্বনাশা লটারি

যা যা মিস করেছেন

আবু বকর ছিদ্দিক রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
যশোরে চলমান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার গেট টিকিটের উপর পুরস্কার দেয়ার নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও আয়োজক প্রতিষ্ঠান তা মানছেন না।

তারা ২০ টাকার মেলার গেট টিকিট এখন জেলা জুড়ে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন আড়াইশো থেকে তিনশো ইজিবাইক ও রিক্সায় করে তা শহরের আনাচে কানাচে থেকে শুরু করে উপজেলার গ্রাম পর্যায় বিক্রি করছেন।

এদিকে, লিখিত ভাবে ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমান টিকিট বিক্রি করতে নিষেধ করে আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছেন। এ চিঠি পেয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছেন। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভ্রামমান টিকিট বিক্রি চলছেই।

অভিযোগ উঠেছে, প্রবেশ টিকিটের নামে যে লটারি দেয়া হচ্ছে সেটা এক প্রকার জুয়া। বিশেষ বাহিনীর নাম ব্যবহার করে তারা যশোরের সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করায় পায়তারা করছে। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যশোরের সচেতন মহল। তারা বলছেন গেট টিকিটের উপর পুরস্কার দেয়া হবে ভালো কথা কিন্তু সে গেট টিকিট বাইরে কেন বিক্রি করবে। এখানেই তাদের আসল রুপ বের হয়ে এসেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্শন করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ডিওএইচএস মাঠে মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার উদ্বোধন করা হয়।

মেলার সার্বিক তত্মাবধানে রয়েছে যশোর সেনানিবাস ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড । বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জা ও ব্যতিক্রমী এ মেলা শুরু হওয়ায় যশোরবাসী আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকে। ২০ টাকায় প্রবেশটিকিট কাটলেই পুরস্কার সেটাও পজেটিভ ভাবেই দেখেন তারা। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আয়োজক প্রতিষ্ঠান নাওমী এন্টার প্রাইজের আসল রুপ বের হয়ে আসে।

তারা প্রবেশ টিকিট গেটের সামনে বিক্রির সাথে সাথে যশোর জেলার প্রতিটি উপজেলাতে বিক্রি শুরু করে। আর রাত হলেই শুরু হয় ‘উঠাও বাচ্চা’ ক্ষ্যত লটারির ড্র। ক্যান্টনমেন্টের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, মাসব্যাপী এ মেলার চুক্তির সময় ১৫টি শর্ত দেয়া হয় নাওমী এন্টার প্রাইজকে। কৌশলে নওমী এন্টার প্রাইজের মালিক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠু ৪নং শর্তে জুড়ে দেন তিনি।

সেটি হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধির দোহায় দিয়ে গেটে ভিড় এড়াতে সমগ্র জেলায় ভ্রাম্যমান বুথের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হবে। কিন্তু এটা যে শেষ মেষ জুয়াতে পরিণত হবে তা বুঝতে পারেনি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ৪ নং পয়েন্টে এই শর্ত দেয়া ছিলো এক পর্যায় বিষয়টি নজরে আসে তাদের। তারই প্রেক্ষিতে গত ২ মে ৪ নং শর্তের ওই অংশ টুকু বাতিল ও অন্যান্য অংশ বলবৎ রেখে নাওমী এন্টার প্রাইজের মালিককে লিখিত চিঠি দেন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ। যার স্মারক নাম্বার (২৩.২২.৭০০৫.০০১.৪১.০০২.২৩-২৯২)। সেখানে স্পষ্ট ভাবে চুক্তির মধ্যে থাকা ভ্রাম্যমান ভাবে টিকিট বিক্রির বিষয়টি বাতিল করা হয়। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেই ৬ মে থেকে সারা জেলাই ভ্রাম্যমান গাড়ি বের করে আয়োজক কমিটি। ২০ টাকা করে গেট টিকিট বিক্রি করতে শুরু করেন তারা। শুধুই তাই নয়, ওই শর্ত বাতিলের আদেশে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৮ মে নাওমী এন্টার প্রাইজের মালিক সৈয়দ কবীর আহম্মেদ মিঠু বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ অফিসারের বিরুদ্ধে যশোরের সদর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলাও করেন। যার মামলা নাম্বার-২১২/২৪।

মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এদিকে, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা করায় সমালোচনা শুরু হয়। শেষমেষ অনেকটা চাপের মুখে পড়ে গত ১২ মে আদালত থেকে নিজেই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন কবির আহমেদ মিঠু।

অভিযোগ রয়েছে, এখনো পর্যন্ত অনুমতি না নিয়েই যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমান গাড়ি পাঠিয়ে টিকিট বিক্রি করছে আয়োজক কমিটি। এছাড়া, মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে মেলার মাঠেই প্রতিদিন ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার ফলাফল নিজেদের ইউটিউব এ্যাকাউন্ট ও ফেসবুক পেজে প্রচার করছেন। কিন্তু স্থানীয় কোনো পত্রিকায়ও ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছেনা। এতে করে উপজেলা পর্যায়ের অনেকেই ফলাফল জানতে পারছে না। ফলে এর ড্র’র স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

এ বিষয়ে যশোর সেনানিবাসের ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এ ডব্লিউ.এম রায়হান শাহ বলেন, তারা একটি মামলা করেছিলো পরবর্তিতে তারাই সেটি উঠিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তাদেরকে ভ্রাম্যমান টিকিট বিক্রিতে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো তা বহাল রয়েছে। তারা অবৈধভাবে ভ্রাম্যমান গাড়িতে টিকিট বিক্রি করছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। একই সাথে এ বিষযে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে নাওমী এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারী সৈয়দ কবীর আহমেদ মিঠু বলেন, তাদের বাইরে টিকিট বিক্রির অনুমতি রয়েছে। তিনি বলেন, আর কিছুই মোবাইলে বলা যাবেনা। এ বিষয়ে জানতে মাঠে এসে কথা বলতে বলেন।

সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল বলেন, ক্যান্টেনমেন্টের নামে যেহেতু বিক্রি হচ্ছে অবশ্যই সে দায় তাদের। যেহেতু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকলের শ্রদ্ধা রয়েছে। সেখানে তাদের নাম ব্যবহার করে কেউ অবৈধ জুয়ার ব্যবসা করবে সেটা মেনে নেয়া যায়না। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.