বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অধীনে বাংলাদেশে প্রথম এই ‘সুপার স্পেশালাইজড’ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায়। ১৩ তলা ভবনে অত্যাধুনিক এই হাসপাতালে এক ছাদের নিচেই মিলবে সবধরনের স্বাস্থ্য সেবা।
উদ্বোধনের আগে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক জুলফিকার রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মা ও শিশুর সব ধরনের সেবা এ হাসপাতালে এক জায়গায় পাওয়া যাবে।
“এখন আমাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়। কিন্তু এখানে সব ধরনের রোগের জন্য আলাদা আলাদা কেন্দ্র থাকবে, ফলে একটি জায়গাতেই সব সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।”
তিনি জানান, নতুন এই হাসপাতালে সেন্টার ফর স্পেশালাইজড অটিজম অ্যান্ড মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, ইমারজেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোএনটারোলজি সেন্টার, কার্ডিও অ্যান্ড সেরিব্রো-ভাসক্যুলার সেন্টার, কিডনি সেন্টার এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টারসহ আরও কয়েকটি সেন্টার থাকবে।
১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চকে (আইপিজিএমআর, পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত) বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই অধ্যাধুনিক এ হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে যেখানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবাও পাওয়া যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই, এ বিশ্ববিদ্যালয় আরও উন্নত হোক। আমি আশা করি, আমাদের চিকিৎসক সমাজ গবেষণা করে চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মেডিকেল শিক্ষার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আমি আশা করি।”
বিএসএমএমইউর উত্তর পাশে ৩ দশমিক ৪ একর জমিতে এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হবে এই হাসপাতাল। এই ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।
অর্থায়নে সহয়োগিতার জন্য কোরিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি একটি গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে।
শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চিকিৎসা সেবাটা গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি। প্রত্যেকটা হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। মানুষকে যেন অহেতুক ঢাকা শহরে আসতে না হয়, জায়গায় বসে যেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা পায় সে সুযোগ সৃষ্টির পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
“আমরা চাই দেশটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলুক, আমরা সেটাই চাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশে অনেকে ধনী হয়েছেন। তাদের হাঁচি-কাশি হলে বিদেশে যেতে চায়। আমি মনে করি, যারা অনেক অর্থশালী বা সম্পদশালী, তারা যদি বিদেশে যান, আমার আপত্তি নেই। আমার এখানকার যারা সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা একটু জায়গা পাবে, চিকিৎসা করার সুযোগ পাবে।”
প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রতিশ্রুতি আবারও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সিলেটের আইনও পাস হবে।”
মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ালেখার মান ঠিক রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “প্রাইভেট অনেক মেডিকেল কলেজ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আদৌ কোনো পড়াশোনা হচ্ছে কি না? সত্যিকারের ডাক্তার তৈরি হচ্ছে, না রোগী মারা ডাক্তার হচ্ছে সেটাও আমাদের দেখা দরকার।
“একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদল্যালয় পারবে সেটা নজরদারিতে রাখতে। যাতে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। চিকিৎসা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করতে চাই।”
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে বর্তমানে ১৯০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যার ৪৫ শতাংশ দরিদ্র রোগীদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা।
এ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার রোগী এবং আরও হাজারখানেক রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিয়ে থাকেন।
এ হাসপাতালে ৩০ টাকার টিকেট কেটে যেসব রোগীর সেবা নেওয়ারও সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য একটি তহবিল তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী দুই দফায় ১৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আরো ১০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।