বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

এপ্রিলেই মহাকাশে যাত্রা করবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

যা যা মিস করেছেন

দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এপ্রিলেই মহাকাশে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মার্চের শেষ সপ্তাহের (২৬-৩১ মার্চ) যেকোনও দিন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা থাকলেও উৎক্ষেপণ-সংস্থার কাছ থেকে চূড়ান্ত দিনক্ষণ না পাওয়ার কারণে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই আসতে পারে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রকল্প-পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেজবাহউজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। সেখানে আরও উপস্থিত থাকবেন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ এ প্রকল্পের পরিচালক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানটি অনলাইনে সম্প্রচার করা হবে। সেখান থেকে নিয়ে বিটিভি সম্প্রচার করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে দেশে থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে ১৫৪৪ কোটি টাকা, বাকি ১৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফিনান্সিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিটিআরসি যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’কে ২০১২ সালের ২৯ মার্চ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুসারে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের অরবিটল স্লট ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ক্রয় করা হয়।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও ইত্যাদি সংস্থা বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন স্যাটেলাইট অপারেটরের কাছ থেকে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপন্ডার ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় করে থাকে। অনুমোদন পাওয়া আরও স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হলে এ ভাড়া আরও বাড়বে। শুধু ব্রডকাস্টিং চাহিদার পূরণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে এ অর্থ দেশেই রাখা সম্ভব হবে। অন্যদিকে স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে আরো বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রচার সেবার প্রসার সহজ এবং বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া ছাড়াই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কম মূল্যে ব্রডকাস্টিং সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ট্রান্সপন্ডার বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

স্পেশ এক্স’ এর উৎক্ষেপণযান বা রকেট ফ্যালকন-৯ এই স্যাটেলাইটটিকে মহাকাশে ১১৯.১º পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অবস্থিত অরবিটল স্লটে স্থাপিত করবে। আর এর মাধ্যমে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী ৫৭তম গর্বিত দেশ হিসেবে বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ ফ্রান্সের কান ও টুলুস ফ্যাসিলিটিতে (কারখানায়) ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস গত ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর  বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ‘টার্ন কি পদ্ধতি’ চুক্তির আওতায় কৃত্রিম উপগ্রহটি নির্মাণের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি খুব শীঘ্র ফ্রান্স থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো বিমানে উৎক্ষেপণ স্থান ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল আনা হচ্ছে।

প্রকল্পের ২য় বৃহৎ অংশটি হল লঞ্চ প্যাড থেকে ফ্যালকন-৯ রকেট দিয়ে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ। রকেট প্রস্তুতকারী ও উৎক্ষেপণকারী বিখ্যাত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘স্পেশ এক্সপ্লোরেশন টেকনোলিজস কর্প’ রকেট নির্মাণের কাজটি শেষ করেছে। ফ্রান্সের থ্যালেসের তৈরি স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস এক্স এর তৈরি রকেট ও সময়সূচি অনুসারে মহাকাশে যাত্রা করবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রাইমারী এবং রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে সেকেন্ডারি গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে।

এই কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের পর সেটি পরিচালনা, এর বিভিন্ন সুবিধার সফল ব্যবহার, বাণিজ্যিকভাবে এর ট্রান্সপন্ডার বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ইতোমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানী গঠন করা হয়েছে। কোম্পানিতে কারিগরি লোকবল নিয়োগও করা হয়েছে এবং লোকবলকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security