...
শনিবার, মে ১৮, ২০২৪

মিয়ানমারে খ্রিস্টানদের প্রতি লক্ষ রেখে ‘রোহিঙ্গা’ উচ্চারণ করেননি পোপ

যা যা মিস করেছেন

মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, সংখ্যালঘু ক্যাথলিকদের সুরক্ষা আর রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন জোরদারের আশঙ্কা থেকেই পোপ ফ্রান্সিস পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর নাম উচ্চারণে সমর্থ হননি।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ এমনই আভাস দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু ক্যাথলিকদের সুরক্ষায় ভ্যাটিকান সিটি এবং মিয়ানমারের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পকোর্ন্নয়নের স্বার্থেই পোপ মিয়ানমার সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক বিশ্লেষণেও পোপের সফরকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের নাম না নেওয়াকে মিয়ানমারের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এক সতর্ক কূটনৈতিক পদক্ষেপ আখ্যা দিয়েছে এশিয়াভিত্তিক ওই সংবাদমাধ্যম। একইভাবে কানাডাভিত্তিক টরেন্টো স্টার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেতে পারেননি বলেই শব্দটি ব্যবহার করেননি পোপ।

মঙ্গলবার নেপিদোতে পোপ তার মিয়ানমার সফরের মূল ভাষণ দেন। সেই ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি তিনি। বিবিসির এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে প্রতিবেদক জোনাথন ফিশার জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি বর্জন করে কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং অং সান সু চি’র অস্বস্তি ঠেকাতে পেরেছেন পোপ।

চ্যানেল নিউজ এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাবের কথা চিন্তা করে মিয়ানমারের কার্ডিনাল গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ভয় পেয়েছিলেন। এই বাস্তবতায় দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনতাকে উত্তেজিত করতে চাননি পোপ। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর আরও বেশি করে নিপীড়ন নেমে আসার আশঙ্কা ছিল।
বিবিসির বিশ্লেষণে অবশ্য রোহিঙ্গাদের বাইরে পোপের নিজ সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে। ওই বিশ্লেষণ অনুযায়ী মিয়ানমারে বসবাসরত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন তিনি। তাদের নাজুক অবস্থার কথা বিবেচনা করেছেন।
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার আগেই ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার সফরের দিন-ক্ষণ নির্ধারণ হয়েছিল। মিয়ানমারে বসবাসরত ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু মানুষের বিপন্নতায় ভ্যাটিক্যান ও মিয়ানমারের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যই এই সফরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। চ্যানেল নিউজ এশিয়া রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করার পেছনে সেই কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে একটি বড় কারণ আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের স্বার্থে পোপ সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সু চি এখন পোপের সফরকে সফল দাবি করতে পারবেন। সে দেশের ক্যাথলিক চার্চে প্রবেশের মধ্য দিয়ে পোপ দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের আভাস দিয়েছেন মনে করছেন বিবিসি প্রতিবেদক। তার ধারণা, কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পোপ এখন ভ্যাটিক্যানের মাধ্যমে সরব হতে পারবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, ধর্মীয় নেতার চেয়ে অনেক বেশি কূটনীতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মিয়ানমারে পা রেখেছেন পোপ ফ্রান্সিস।

অং সান সু চি’র সমর্থকদের দাবি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাদের নেত্রীর নীরবতা এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চলছে অভিযোগ করে পশ্চিমা বিশ্ব যেসব সমালোচনা করছে তাতে কেবল সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ক্ষমতার লড়াইকে দুর্বল করা হবে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন সু চি রোহিঙ্গাদেরকে প্রাধান্য দেন না এ কথাটি কেবল অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পোপের সফরের সংবাদ সংগ্রহে থাকা বিবিসি প্রতিবেদক জনাথন জানিয়েছেন, পোপের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, সু চির সমর্থকদের এইসব যুক্তি-তর্ক শুনেছেন তিনি। মঙ্গলবার নেপিদোতে দেওয়া ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করলেও তিনি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে পরোক্ষে রোহিঙ্গা সংকটকে ইঙ্গিত করেছেন। যারা মিয়ানমারকে নিজেদের মাতৃভূমি মনে করে তাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন পোপ। মিয়ানমারের প্রত্যেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সবাইকে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা গঠনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, মিয়ানমার সফরে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব থেকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকেছেন। তবে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চরণ না করাটা পোপের বড় ভুল মনে করিছ না। কেননা রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করেও তিনি দেশটি জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করেছেন। সূত্র- বিবিসি বাংলা

মিয়ানমার সফরের আগে দেশটির কর্তৃপক্ষ ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার সফরে তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করা প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

পোপ ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ শান্তি, সমাজের প্রতিটি সদস্যের প্রতি সমান সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার প্রসঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী এবং তার পরিচয়ের প্রতি সম্মান, আইনের শাসনের প্রতি সম্মান, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারের সবচাইতে বড় সম্পত্তি জনগণ উল্লেখ করে বলেছেন, দেশটির জনগণ অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এই সংঘাত র্দীঘদিন ধরে চলেছে, যা সমাজে গভীর বিভক্তির সৃষ্টি করেছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বেশ কৌতুহলী ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন তিনি শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলেন? এতে কী তার অবস্থান ক্ষুণ্ণ হয়েছে?

অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, পোপ যদি রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করতেন তাহলে আমরা আনন্দিত হতাম এবং কিছুটা নিশ্চিতবোধ করতাম। তবে আমরা এটাও বুঝি, তিনি এমন একটা রাষ্ট্রে গেছেন যেখানে তারা নিজেদের নাগরিকদেরই সম্মান করতে জানে না এবং বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার সাথেই তাদের উগ্র সম্পর্ক। তাই এই পরিপ্রেক্ষিতে পোপ নিজের সম্প্রদায়ের কথা ভেবে হয়তো রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কথা বলেননি। আমরা জানি, মিয়ানমার থেকেই তাকে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা শব্দটি না বলার জন্য। এর ফলে হয়তো খ্রিস্টীয় ধর্মালম্বীদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি হতে পারত। এই জন্য পোপ হয়তো রোহিঙ্গ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.