শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪

শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির

যা যা মিস করেছেন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার (গ্রেডেশন) তালিকা তৈরি নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা শিক্ষা অফিসারদের এই অনিয়মের কারণে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে আগেকার (জ্যেষ্ঠ) শিক্ষকদের সঙ্গে নতুন করে সরকারি করা প্রাথমিক শিক্ষকদের । সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে প্রাথামিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিসারদের গ্রেডেশন তালিকা করে পাঠাতে বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। তবে জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও নীতিমালা অনুযায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদেরকে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।‘

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হবে তাদের চাকরির অর্ধেক সময় ধরে। এতে যদি সম্ভব না হয়, তাহলে মেধাতালিকা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি যোগ্যতা সমান হয়, তাহলে জন্ম তারিখ ধরে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া যদি নিয়োগ একই দিনে হয়, সেক্ষেত্রে যিনি আগে যোগদান করেছেন, তিনি পাবেন জ্যেষ্ঠতা। আদালতেরও একই নির্দেশনা রয়েছে।

এই নিয়ম না মেনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের ও তদবিরের শিক্ষকদের তালিকা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে বিভাগীয় অফিসের চাপের মুখেও কোনও কোনও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনিয়ম করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এই সংখ্যা বেশি নয়।‘ গ্রেডেশন তালিকা চূড়ান্ত না হলে আগেকার কর্মরত এবং নতুন সরকারি হওয়া সব শিক্ষক পদোন্নতি নিয়ে ঝামেলায় পড়বেন বলে জানান হাবিবুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি হয় ২০১৩ সালে। একই বছর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হয়। সংশোধিত প্রজ্ঞাপনের ৪(২)ঘ-ধারায় বলা হয়, ‘জাতীয়করণ করা প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হবে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের এভাবে সৃষ্ট পদের বিপরীতে আত্মীকরণের পর অবশিষ্ট পদে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।’

‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ’-এর সভাপতি শাহীনুর আল-আমীন বলেন, ‘এর বাইরেও সুযোগ চান নতুন জাতীয় করা স্কুলগুলোর শিক্ষকদের একটি অংশ। তারাই বার বার উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছেন। একটি মামলায় হেরে গিয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নতুন সরকারি হওয়া শিক্ষকদের চাকরিতে যোগদানের অর্ধেক সময় ধরে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে হবে।

কিছু অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এভাবেই গ্রেডেশন তালিকা তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সব শিক্ষককে সহকারী শিক্ষক হিসেবে আত্মীকরণ করা হয়। এরপর প্রধান শিক্ষক পদে থাকার জন্য আত্মীকরণের এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যান তারা। একের পর এক রিট আবেদন করেন।

এছাড়া সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলে অযোগ্য শিক্ষকরাও এ দায়িত্ব পেতে চান। এসব কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির দফতর সম্পাদক আব্দুল গফুর আরও বলেন, ‘আদালতের সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যেখানে যে অবস্থায় রয়েছেন, তাদের সেখানেই রাখতে হবে। রিট আবেদনটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে গ্রেডেশনের তালিকা করা নিয়ে।‘

আব্দুল গফুর জানান, গ্রেডেশন নিয়ে নানা টালবাহানার কারণে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারটি রিট দায়ের হয়েছে উচ্চ আদালতে। ২০১৪ সালে আমি প্রথম রিট করি। এরপর আরও তিনটি রিট দায়ের করেন অন্য শিক্ষকরা।

সর্বশেষ নওগাঁর নামাভিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ জামালসহ ৩৭০ জন শিক্ষক আবারও উচ্চ আদালতে রিট করেছেন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security