৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের ভারতের আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণে সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শত শত বাংলাদেশি মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
মঙ্গলবার জাতিকে হতবাক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে রুপির বড় এই দুটি নোট বাতিল করে অবিলম্বে তা কার্যকর করার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, জাল নোট, কালো টাকা ও দুর্নীতি ঠেকাতে তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
অনেকেই এটাকে ভারতের ‘সমান্তরাল অর্থনীতির’ বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হিসেবে বর্ণনা করলেও এই সিদ্ধান্ত সাধারণ ভারতীয়দের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মোদীবিরোধীরা সমালোচনা করছেন।
এই ঘোষণার পর ৫০০ ও ২,০০০ রুপির নতুন নোট বোঝাই করার জন্য বুধবার সবগুলো ব্যাংক ও এটিএম বুধ বন্ধ রাখা হয়। ওই সময়ের সময়ের মধ্যে ১০০ রুপি ও এর নিচের নোটগুলো বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতে চিকিত্সা করাতে এসে পকেটে রুপি নিয়ে ঘোর বিপাকে বাংলাদেশের মানুষ। চিকিত্সা করানোর জন্য বেনাপোল সীমান্ত পার হয়েই কেউ কিনেছিলেন রুপি। কেউ বা আবার কলকাতায় এসে প্রয়োজন মত টাকা ভাঙিয়ে রুপি নিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার দিনভর তাদের সব চেয়ে বড় ‘রোগ’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল রুপি। ৫০০, হাজার রুপির নোট আছে পকেটে। কিন্তু তার কোনো মূল্য নেই। সোমবার মধ্য রাত থেকে সেই সব নোট বাতিল হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ১০০ বা তার চেয়ে ছোট অঙ্কের টাকা দিয়েই এদিন কলকাতাসহ সারা ভারতে কেনাকাটা করা গেছে। সারা ভারত জুড়েই একই চিত্র।
মঙ্গলবার পিয়ারলেসে আসা বাংলাদেশি রোগীদের ছুটির সময় সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতালের চিফ এক্সিকিউটিভ সুদীপ্ত মিত্র জানান, রোগী ভর্তি কিংবা ডাক্তার দেখাতে সমস্যা হয়নি। এদিন ৪২ জন রোগীর ছুটি হয়, তার মধ্যে ৩-৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা আগে থেকেই রোগীদের এসএমএস করে মঙ্গলবার রাত ১২টার মধ্যে পেমেন্টে ও বুধবার খুচরো নোট আনার কথা জানিয়ে দিয়েছিলাম।
দু’জন বাংলাদেশি নাগরিকের ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড ছিল না। সব খুচরো নিয়ে নিলে তাদের থাকা-খাওয়ার সমস্যা হত। মানবিকতার খাতিরে পরিচয়পত্র নিয়ে তাদের থেকে ৫০০, ১০০০ টাকা নিয়েছি। রাজারহাটের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে বাংলাদেশি রোগীরা সমস্যায় পড়েন। নোটের ধাক্কায় কেমো দিতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এরকম সমস্যায় পড়েছেন হাজারো বাংলাদেশি। শুধু চিকিত্সাই নয়, ওষুধও কিনতে পারেননি অধিকাংশ মানুষই।
ভারতীয় নাগরিকরা বুধবার থেকে ব্যাংকে গিয়ে টাকা বদলে নিতে পারবেন। কিন্তু বাংলাদেশি বা অন্য বিদেশি নাগরিক তাদের কী হবে? উত্তর ছিল না দিনভর। রাতে জানা গেল, বিদেশি নাগরিকরা (বাংলাদেশিই বেশি)? ভারতে এসে ফরেন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে রুপি কিনে থাকলে সেই কেনার রসিদ দেখিয়ে দৈনিক ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বদলে নিতে পারবেন। কিন্তু টাকা কেনার রসিদ না থাকলে রুপি এখন বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে কাগজের টুকরো মাত্র।
ভারতের ব্যাঙ্কগুলো সূত্রে জানা গেছে, এই জটিলতা থেকে বাঁচতে হলে নতুন করে যারা ভারতে আসছেন তারা যেন অবশ্যই পাসপোর্টে নথিভুক্ত করিয়ে ডলার আনেন ভারতে। তা না হলে আগামী মাস খানেক বিপাকে পড়তে হবে বাংলাদেশি নাগরিকদের।