ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার আলাদা হওয়ার দাবি তুলেছেন স্টেটের বাসিন্দারা।
এটা টুইটারে ছড়ানো কোনো কৌতুক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার জনগণ সত্যি সত্যিই দেশটি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা এখন বিবেচনা করছে। এর কারণ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়।
‘ইয়েস ক্যালিফোর্নিয়া ইনডিপেনডেন্স ক্যাম্পেইন’ নামে একটি গোষ্ঠী গতকাল বুধবার থেকে জোরেশোরে এ প্রচার শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার এ প্রক্রিয়া পরিচিতি পেয়েছে ‘ক্যালেক্সিট’ নামে। সন্দেহ নেই, এ বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ‘ব্রেক্সিটে’র নাম অনুসরণ করেই এই নামকরণ। এই গোষ্ঠী ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য বেশ আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
ইয়েস ক্যালিফোর্নিয়া গোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতির অঞ্চল ক্যালিফোর্নিয়া অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ফ্রান্সের চেয়ে শক্তিশালী। এর জনসংখ্যা পোল্যান্ডের চেয়ে বেশি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ৪৯টি অঙ্গরাজ্যের সঙ্গেই নয়, বিভিন্ন বিবেচনায় যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে ক্যালিফোর্নিয়া।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এমন অনেক মূল্যবোধ আছে, যেগুলোর সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার বিরোধ রয়েছে। এভাবে থাকার অর্থ হলো, আমরা অন্য রাজ্যগুলোর জন্য অব্যাহতভাবে আমাদের ক্ষতি করে যাব, আমাদের শিশুদের অকল্যাণ বয়ে আনব।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ‘ব্রেক্সিট’ অনুসরণে ‘ক্যালেক্সিট’র দাবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সোস্যাল মিডিয়ায়। মঙ্গলবার রাতে ভোটের ফল প্রকাশের পর ‘ক্যালেক্সিট’ টুইটারে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়ায় বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়। টুইটারে ক্যালিফোর্নিয়ার বিচ্ছিন্নতার দাবি তোলার পাশাপাশি স্টেট রাজধানী স্যাক্রোমেন্টেতে সমাবেশেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
শেরভিন পিশেভার নামে একজন ব্যবসায়ী আগেই টুইটারে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ট্রাম্প জিতলে ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারে পৃষ্ঠপোষকতা করবেন তিনি।
বুধবার সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অবস্থানে অবিচল থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের জন্য আমি যা করতে পারি তার মধ্যে এটাই শ্রেষ্ঠ। দেশ এখন গুরুতর বাক বদলের সময়ে।” ‘ইয়েস ক্যালিফোর্নিয়া ইন্ডিপেনডেন্স’ প্রচারণার মূল ব্যক্তি লুই ম্যারিনেলি ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল পার্টির সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার লক্ষ্যে রাজ্যজুড়ে ভোট অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে ২০১৫ সালে সাতটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যার প্রতিটির জন্য ২০০ ডলার খরচ করেন তিনি। সে সময় তিনি লস এঞ্জেলেস টাইমসকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিভাবে যা হচ্ছে তা এখান থেকে অনেক ভিন্ন।
“আমি চাই ক্যালিফোর্নিয়া সেসব করুক যা এটা পারে। আমাদের গ্রুপ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সম্ভাবনা থেকে আমাদের পিছনে আটকে রাখছে।” গত জুনে যুক্তরাজ্যে গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় আসার পর এই আন্দোলন নতুন গতি পেয়েছিল।