ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউইয়র্কের কুইন্সে। তার বাবা ফ্রেড ট্রাপ নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। ছেলেবেলায় ট্রাস্ম ছিলেন খুবই দুরন্ত প্রকৃতির। যার দরুণ ট্রাপকে নিউইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি করানো হয়েছিল।
অষ্টম শ্রেণি এবং হাইস্কুল জীবন নিউইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতেই শেষ করেন ট্রাম্প। নিউইয়র্ক মিলিটারি একাডেমি তাকে অন্যান্য ছেলেদের চেয়েও বেশি সামরিক প্রশিক্ষণ শিখিয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক। তিনি দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের পরিচালক এবং ট্রাম্প এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার পিতার যথেষ্ঠ অনুপ্রেরণা ছিল।
ট্রাম্প পেসসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হোয়ারটন স্কুলে অধ্যয়নের সময় তার পিতার ‘এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান’ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি তার পিতার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প তার পিতার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন রাখেন। ট্রাম্প বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল স্টেট ব্যবসা এবং মিডিয়া তারকাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
গত বছরের ১৫ জুন রিপাবলিকান পার্টির অধীনে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প তার পূর্বের প্রচারণা কর্মকাণ্ড দিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনসমর্থন অর্জনে সক্ষম হন। পরে তিনি রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন লাভ করেন।
ট্রাম্পের মা ম্যারি অ্যানি একজন গৃহিণী ও লোকহিতৈষী ছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। তার মা স্কটিশ দ্বীপ লিউয়িসের টং গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৩০ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং ১৯৩৬ সালে ফ্রেড ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ট্রাম্পের এক ভাই রবার্ট এবং দুই বোন ম্যারি অ্যানি এবং এলিজাবেথ। ট্রাম্পের বোন ম্যারি অ্যানি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের একজন বিচারপতি। ট্রাম্পের আরেক ভাই ফ্রেড জুনিয়র ১৯৮১ সালে মারা যান।
ট্রাম্পের পৈতৃক পিতামহরা জার্মানির অভিবাসী ছিলেন। তার দাদু ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের জার্মানিতে নিজের ক্লোনডিক গোল্ড রাশ নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল। তার দাদু যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসেন ১৮৮৫ সালে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের আসল পদবি ছিল মূলত ‘ড্রাম্পফ’। কিন্তু ১৭ শতাব্দিতে এটি অপভ্রংশ হয়ে ট্রাম্প হয়ে যায়।
ট্রাম্প লিখিত ১৯৮৭ সালের একটি বই, দ্য আর্ট অব দ্য ডিল গ্রন্থে ট্রাম্প ভুলবশত উল্লেখ করেছিলেন যে তার দাদু ফ্রেডেরিক ট্রাম্প একজন সুইডিশ বংশোদ্ভূত। মূলত এই দাবি ছিল তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের। কিন্তু ট্রাম্প পরবর্তীকালে স্বীকার করেছিলেন যে তার পূর্ব-পুরুষরা আসলে জার্মান বংশোদ্ভূত এবং তারা ১৮৯৯ সালে নিউইয়র্ক শহরে জার্মান-আমেরিকান স্টুবেন প্যারেডে সেনাবাহিনীর গ্র্যান্ড মার্শাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ট্রাম্প পরিবারের দোতলা বিশিষ্ট মক ট্যুডোর রিভাইভাল আদলে একটি বাড়ি ছিল যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিউ ফরেস্ট স্কুলে অধ্যয়নের সময় বসবাস করতেন।
ট্রাম্প পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধীন হোয়ার্টন স্কুল অব বিজনেসেও অধ্যয়ন করেছেন। হোয়ার্টনে অধ্যয়নের সময় তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠান ‘এলিজাবেথ ট্রাম্প অ্যান্ড সান’ কোম্পানিতে কাজ করতেন। ১৯৬৮ সালে তিনি হোয়ার্টন বিজনেস স্কুল থেকে অর্থনীতির উপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
ট্রাম্প স্ববিরোধী পন্থায় বিভিন্ন সময়ে তার রাজনৈতিক বিষয়ক পাণ্ডিত্য এবং অবস্থান বর্ণনা করেছেন। পলিটিকো তার রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখা করেছেন ‘সারগ্রাহী, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনকারী এবং প্রায়শ স্ববিরোধী’ হিসেবে। তিনি পূর্বে তার রাজনৈতিক দলকে তালিকাভুক্ত ও সম্মিলিত করেছেন রিপাবলিকান পার্টি, ইনডিপেন্ডেস পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে।
ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের ৭ এপ্রিল মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে নিউইয়র্ক শহরের মার্বেল কলেজিয়েট চার্চে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, এরিক ট্রাম্প এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। ১৯৯০ এর প্রথম দিকে ইভানার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈবাহিক সম্পর্ক সামান্য উত্থান-পতন দেখা দেয়।সেই সময় ট্রাম্প অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলসের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। শেষে ১৯৯১ সালে ইভানা আর ট্রাম্পের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।
১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ট্রাম্প আর অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলস বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু ১৯৯৭ সালের মে মাসে তারা আলাদা হয়ে যান এবং ১৯৯৯ সালের জুন মাসে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। এ সময়ে তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
ট্রাম্প ১৯৯০ এর মাঝামাঝি সময়ে মডেল কারা ইয়ঙ্গের সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া রাজকুমারী ডায়ানার প্রতিও ট্রাম্পের অনুরক্তি ছিল। ট্রাম্প ১৯৯৭ সালে তার বই ‘দ্য আর্ট অব কামব্যাক’-এ লিখেছিলেন, ‘আমার শুধু একটি অনুতাপই রয়েছে যে আমি কখনও ডায়ানা স্পেন্সারকে প্রণয় প্রার্থনা করার সুযোগ পাইনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘তার (ডায়ানা) সঙ্গে আমার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি একজন প্রকৃত রাজকুমারী- একজন স্বপ্ন বালিকা (ড্রিম লেডি)।’
ট্রাম্প ১৯৯৮ সালে স্নোভেনিয়ান মডেল মেলানিয়া নসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারির ২২ তারিখে ফ্লোরিডার পাম বিচ দ্বীপে বেথেসডা-বাই-দ্য-সি এপিসকোপাল চার্চে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৬ সালে মেলানিয়া মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং একই বছর ২০০৬ সালে মিলেনিয়া এবং ট্রাম্প, ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ট্রাম্পের সাতজন নাতি-নাতনি রয়েছে।
২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ৭০০ ক্লাবকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, একজন প্রেসবাইটেরিয়ান এবং অনেক বছর ধরে গীর্জার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি- ধর্ম একটি বিস্ময়কর জিনিস। আমি মনে করি আমার ধর্ম অপরূপ।