যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চিত থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে অর্থ হ্যাকাররা হাতিয়ে নিয়েছিল, তার একটি অংশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থের হদিস বের করে তা উদ্ধারে ফিলিপিন্সের এন্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ চলছে বলে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
তবে কী পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়েছে, আর কী পরিমাণ আদায়ের চেষ্টা চলছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
“সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে তদন্তলব্ধ তথ্যাদি অপ্রকাশিত রাখা হচ্ছে,” বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে, আপাতত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এতটুকুই বক্তব্য। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।”
ফিলিপিন্সের এন্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ দেশটিতে অবৈধভাবে ঢুকে পড়া ১০ কোটি ডলারের অনুসন্ধানে নামে; যে অর্থের অধিকাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে হ্যাকারদের হাতিয়ে নেওয়া বলে তারা জানিয়েছিল।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সের সংবাদপত্র দি ফিলিপিন ডেইলি ইনকোয়ারারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়ে তা ফিলিপিন্সে পাচার করে। পরে ওই অর্থ সেখান থেকে ক্যাসিনোসহ একাধিক হাত ঘুরে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে আরও খবর এসেছে, চীনা হ্যাকাররা নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট হ্যাকড করে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ কোটি ডলার ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে এবং বাকি অর্থ শ্রীলংকার একটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক একাউন্টে রক্ষিত স্থিতি থেকে ‘হ্যাকড’ হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অর্থের একাংশ ইতোমধ্যে আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
“অবশিষ্ট অঙ্কের গন্তব্য শনাক্ত করে তা ফেরৎ আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ফিলিপিন্সের এন্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে।”
এই ঘটনায় ফিলিপিন্সের এন্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের আদালতে মামলা দায়ের এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
এই টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সে গিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এসেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের ডিজিএম জাকের হোসেন ও বিএফআইইউর যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রবকে দেশটিতে পাঠানো হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান।
সেখানে গিয়ে এ দুই কর্মকর্তা ‘ব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিন্স (বিএসপি)’ এবং ‘এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)’-এর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বিশেষ এ দুটি বৈঠকে হ্যাকার গ্রুপ চিহ্নিত করে টাকা ফেরতের ব্যবস্থার বিষয়ে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আক্রান্তের এই ঘটনা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে তার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটিভ টিম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে।
“ফিলিপিন্সের এন্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ ফেরতে আদালতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনবোধে বিশ্ব ব্যাংকের স্টোলেন এসেটস রিকভারি (এসটিএআর) প্রক্রিয়াও অবলম্বিত হবে।”