একুশে বইমেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি তুলে ধরে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তাদের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থার পরও কোনো লেখক, ব্লগার, প্রকাশক চাইলে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন সময়ে একটি চক্র যাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। কখনো সাদা পোশাকে আবার কখনো থানা পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।”
গত এক বছরে লেখক-প্রকাশক হত্যা ও হামলার ঘটনাগুলোর তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
রোববার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকার পুলিশ প্রধান। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বইমেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, “যে চক্রটি সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে কাজ হচ্ছে।
“তারপরও যদি কেউ নিরাপত্তাহীন মনে করেন, পুলিশ কন্ট্রোলরুমে বিষয়টি জানান, তাহলে তাকে বিশেষভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
পহেলা ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছর বইমেলার বাইরে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং তারপর বিভিন্ন স্থানে মুক্ত চিন্তার লেখক ও প্রকাশকদের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে এবার নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইপ্রেমীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
মেলার দর্শনার্থীদের বিষয়ে পুলিশের গণমাধ্যম শাখার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশি স্টল, বিদেশি অতিথি এবং ভাষা সৈনিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা পথ ছাড়াও থাকবে মেলা ও তার আশপাশের এলাকায় সাতটি আর্চওয়ে, পুরো এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, দুই শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, পুলিশের ফুট পেট্রল, মেলার ভেতরে দুইটি কন্ট্রোলরুম থাকবে, যেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
যানবাহন চলাচলের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে রোমানা চত্বর ক্রসিং, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং এবং জগন্নাথ হল ক্রসিং থেকে টিএসসি হয়ে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন রাখা যাবে না।
দোয়েল চত্বর থেকে তিন নেতার মাজার হয়ে টিএসসি সড়ক দ্বীপ অভিমুখে যানবাহন চলবে করবে না। বইমেলায় আসা দর্শনার্থীদের গাড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম মাঠে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও মেলায় ইভটিজিং প্রতিরোধে থাকবে পুলিশের বিশেষ দল। মেলা প্রাঙ্গণে ফায়ার টেন্ডার ও লাইটিং টিম, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার, ব্লাড ব্যাংকও থাকবে।
পুলিশ কমিশনার মো.আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “জননিরাপত্তার স্বার্থে মেলা চলাকালীন সময়ে সন্ধ্যার আগে (বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটের মধ্যে) থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসাধারণ প্রবেশ করবে না।”
সম্প্রতি শহরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ৯৮ ভাগ সাফল্যের পাশাপাশি ৯৫ ভাগ ঘটনা ঘটার আগেই পুলিশ সেসব প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে বলে জানান পুলিশ কশিনার। রহস্য উদঘাটনে বলার মতো বহু সাফল্যও পুলিশের রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ মারুফ হাসান, যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।