রবিবার, এপ্রিল ২১, ২০২৪

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও   থেমে নেই  বিড়ম্বনা 

যা যা মিস করেছেন

তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
নারীরা চার দেয়ালের সীমাবদ্ধতা  ভেঙে পুরুষের সঙ্গে  পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। তবুও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনো বদলায়নি নারীদের প্রতি পুরুষের মানসিকতা। এ কারণেই কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো নিপীড়নের শিকার হন, মুখোমুখি হন ব্যক্তিগত নানা বিড়ম্বনার। স্বাধীনতার  দীর্ঘ এই সময়েও সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা-বিড়ম্বনা থেকে কর্মজীবী নারীরা এখনো মুক্তি পায়নি।নারীরা প্রতিবন্ধকতা ও বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার এই চিত্র প্রায় সর্বক্ষেত্রে। মফস্বল এলাকায় এই চিত্র যেন আরও বেশি। কয়েকজন কর্মজীবী নারীর সঙ্গে কথা বলে উঠে আসে এমন না জানা অনেক তথ্য।
গাইবান্ধা – গোবিন্দগঞ্জ সড়কের পাশে মনোহরপুর এলাকায় এক জমিতে  ফাল্তনের তপ্ত দুপুরে অসহ্য দাবদাহের মধ্যে জমিতে   কাজ করে চলেছেন সাহেরা বেগম।  সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে মেলে ৩০০ টাকা। বলেন দ্রব্য মুল্যের উদ্ধগতি কারনে কোনো রকমে বেঁচে থাকতেই এমন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি। স্বামী আছে, কিন্তু একজনের আয়ে সংসার চলে না তাই   নিজেও সংসারের হাল ধরেছেন।সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নারী– এমন উদাহরণ এখন ভুরি ভুরি। এক সময় নারীদের ঘর থেকে বের হওয়াই কঠিন ছিল। এখন বদলে গেছে চিত্র। পেশাজীবনের নিম্ন থেকে উচ্চ সব পর্যায়ে এখন নারীর পদচারণা। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছে নারী। অর্থনীতিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। বাণিজ্য, উৎপাদন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা– সব ক্ষেত্রে অদম্য নারী।
তবে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি নারীর কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা।অনেক সময় তারা কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মী কিংবা  বড় পদের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। চাকরি হারানোর ভয়ে এসব নির্যাতন  অনেকে গোপনে সহ্য করছে। কর্মক্ষেত্রে কুদৃষ্টি, গায়ে ধাক্কা, অশ্লীল ইশারা, কুপ্রস্তাব, অশ্লীল কথাবার্তা—এ ধরনের অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয় নারীকে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে অফিসের বড় কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে তাদের কক্ষে ডেকে পাঠান। আকার-ইঙ্গিতে নানা কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেন। বুঝলে বিপদ, না বুঝলেও বিপদ।
পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা নানা ধরনের গসিপ, কানাকানি, কথা লাগানো তো নিত্য ঘটনা। বস ও সহকর্মী দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক কর্মজীবী নারীকে। ঘটে যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের  নারী কর্মচারী জানান, গতবছর তিনি কাজে যোগদান করার কিছু দিন পরেই ঐ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কুদৃষ্টিতে পড়ে ।   অন্যায় প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় তার উপর নেমে আসে মানসিক নির্যাতন । বাধ্য হয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছিলেন  ঐ নারী  ।
এছাড়া কর্মক্ষেত্রে রয়েছে নারীর নানা সীমাবদ্ধতা। গাইবান্ধার একটি ক্লিনিকে কাজ করেন ইশরাত জাহান (ছদ্মনাম)। তার মেয়ের বয়স ১ বছর। কাজে আসার সময় মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে আসেন তিনি। আসলে বাধ্য হন রেখে আসতে। কারণ তার অফিসে কোনো ডে কেয়ার সেন্টার নেই।অফিস থেকে সাদিয়ার বাসা প্রায় ৮  কিলোমিটার দূরে। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যার আগ  পর্যন্ত । সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০  ঘণ্টা সন্তান থেকে দূরে থাকতে হয় তাকে। অফিসের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেও তার মন পড়ে থাকে সন্তানের কাছে।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের  গাইবান্ধা জেলা শাখার  সাধারণ সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমিন শিল্পী জানান, আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রগুলো এখনো নারীবান্ধব নয়। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের যে  সহযোগিতা প্রয়োজন তা একেবারেই করা হয়না। ‘অনেকেই মুখে নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্রের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। পারিশ্রমিক ও  অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রেও অনেক জায়গায় নারীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়।তিনি আরো বলেন, ‘নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য সবার আগে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরির মানসিকতা থাকতে হবে।’

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security