মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

৩০ টাকার পিঁয়াজ ১২০ টাকা, ৩ দিনে লুট ২০০ কোটি টাকা

যা যা মিস করেছেন

আতিক খান: হঠাৎ পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় ভারত নাকি অনুতপ্ত। এটা অবশ্য মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, ভারত বেচারা অনুতাপের লজ্জায় কিছু বলতে পারেনি। অনুতপ্ত হলেও ২১ টাকা কেজি দরে এলসি করা আমাদের ৫০০ ট্রাক পিঁয়াজ ঠিকই আটকে রেখেছে। এটা কোন ডিকশনারির অনুতাপ সেটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। এই ট্রাকগুলো ছাড়াতে তারা চাইছে ৩ গুণ দাম, ৬৩ টাকা করে কেজি। বিক্রি করে ফেলা একটা জিনিস আটকে এধরণের চাঁদাবাজি নজিরবিহীন। তবে ওদের এই লজ্জিত আর অনুতপ্ত হবার খুশীতে আমরা ১৯৭ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠিয়েছি।

বাণিজ্য মন্ত্রী কদিন আগে বললেন, পিঁয়াজ এর মূল্য কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এখন বলছেন, মূল্য স্বাভাবিক করতে নাকি একমাস লাগবে। গতবছরও ঠিক এই সময় একই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। ২৩ টাকার পিঁয়াজ তুলেছিল ২৬৫ হতে ৩০০ টাকায়। লুটপাট করা হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। তদন্ত করে কাউকে আইডেন্টিফাই করা হয়নি, কাউকে কোনধরনের শাস্তিও দেয়া হয়নি। এখনও বলা হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত পিঁয়াজ আছে, অথচ দাম ২৫-৩০ টাকা হতে ২-৩ দিনে তোলা হয়েছে ১২০ টাকায়। মাত্র ৩ দিনে লুট হল ২০০ কোটি টাকা৷

কোন পেশার মানুষ সবচেয়ে ধান্ধাবাজ আর মুনাফাখোর? দুঃখজনকভাবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের নামই আগে আসবে। ৩০ টাকার চাল ১০০ টাকা, ২০ টাকার বেগুণ রমজানে ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৫০ টাকা আর নতুন দেশী পিঁয়াজ উঠার আগে প্রতিবছর এই সময়ে মাসব্যাপী পিঁয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেটের এই গৎবাঁধা লঙ্কাকাণ্ড। প্রভাবশালী মানুষরাও জড়িত বলেই এসব সিন্ডিকেটের টিকিটাও কেউ ছুঁতে পারে না। কান টানলে যে মাথা এসে পড়বে। কোন অজুহাতে ১৫-২০ টাকার পিঁয়াজ ভারত রপ্তানি বন্ধ করা মাত্র ৬-৭ গুণ দামে বিক্রি করা যায়? এদের কঠোর শাস্তি কেন দেয়া হল না? ম্যাজিস্ট্রেটদের কাজ কি তাহলে?

দোষ সাধারণ মানুষেরও কি কম? রমজানে বেগুনি কেন খেতেই হবে? কাঁকরোল, পেপে, আলু ইত্যাদি দিয়েও চমৎকার পাকোড়া হয়। পিঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে না চাইলে অন্তত পিঁয়াজ এর ব্যবহার কমিয়ে দিন। কদিন পিঁয়াজ কেনা বন্ধ রাখলে দাম এমনিতেই পড়ে যেত। পিঁয়াজ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, দুই সপ্তাহ ধৈর্য ধরলেই দাম তলানিতে চলে আসত। মজুতদাররা বাপ বাপ করে আপনার বাসার দরজায় পিঁয়াজ দিয়ে যেত। আপনারা কেজি ৮০ হলেও কিনেন, ১২০ হলেও বস্তাভরে কিনেন, প্রতিযোগিতা করে কিনেন, ব্যবসায়ীরা আনন্দে আটখানা হয়ে তো মজুতও করবে, দামও বাড়াবে। আমরা না শুধরালে এসব খেলাও চলতে থাকবে।

নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াটাই একমাত্র সমাধান। ভারত হঠাৎ কুরবানির গরু রপ্তানি বন্ধ করে দেয়াতে আমরা মাত্র দুই বছরেই প্রয়োজনের চাইতে বেশী গরু-ছাগল উৎপাদন করতে পেরেছি। মোট উৎপাদন এর পচনশীল ৩০% বাদ দিলে বার্ষিক পিঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন হয় ৭-৮ লাখ টন। গতবছর ১০ গুণ দামে পিঁয়াজ কিনতে বাধ্য করার নাটক মঞ্চস্থ হবার পরেও কারো মধ্যে কোন পরিবর্তন কি হয়েছে?

উৎপাদণে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব না, ভারতের রপ্তানি নাটক বারবার দেখার পরেও বিকল্প আমদানি করব না, যথেষ্ট মজুত রাখব না, যত দামই হোক লাফিয়ে পড়ে হুমড়ি খেয়ে বস্তায় বস্তায় কিনব, সিন্ডিকেটের কাউকেই প্রমাণ থাকার পরেও ধরব না, মুনাফার অংশ ভাগ বাটোয়ারা হতে দেখেও শীতনিদ্রা যাব, প্রশাসন দুই চারটা লোক দেখানো কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে দায়িত্ব সারবে….. আর আমরা আশা করব পিঁয়াজের দাম কেজি ২৫ টাকাই থাকবে, যার যত ইচ্ছা বাড়াবে না…. এটা আমাদের নিতান্তই দিবাস্বপ্ন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security