মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ

যা যা মিস করেছেন

গত ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিভিন্ন সময়ে জানিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি হয়নি।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া উইং প্রধান)বলেন, “যথা সময়ে প্রকল্পটির কাজ ত্বরান্বিত করতে গত বছরের মাঝামঝি সময় থেকে আমরা চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করি। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের কথা থাকলেও এখনও আমরা সেই চুক্তি করতে পারিনি।”

দীর্ঘ দিন ধরে চিঠি চালাচালি এবং জটিলতার অবসান হওয়ায় গত মাসে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা দেয় দীর্ঘসূত্রতা। তার পরও চলতি মাসে এ ঋণ চুক্তি সম্ভব হবে বলে দাবি করেছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ মাসে চুক্তি হচ্ছে না। এমনকি কবে নাগাদ চুক্তি হবে সেটিও জানাতে পারছেন না ইআরডির কর্মকর্তারা। ফলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগের কাজ আরও পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় রেলপথের নতুন রুট তৈরি হবে। নতুন রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথ দিয়ে খুলনায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা।

অপর দিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি না হওয়ায় প্রকল্পের মূল কাজ আটকে আছে। তবে সরকারি অর্থায়নেরও কিছু কাজ চলছে। তিনি বলেন, চুক্তিটি দ্রুত হলেই ভাল হয়।

সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং বাকি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ই এ প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তীতে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্বিত হতে থাকে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের হস্তক্ষেপে সুদ ও শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যায়। আগের ২ শতাংশ সুদেই ঋণ দিতে রাজি হয় চীন।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং ও ৩ কিলোমিটার ডবলসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, এক দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র‌্যাম্বপস, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস,২৯টি লেভেল ক্রসিং, ৪০টি আন্ডারপাস, ১৪টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ কম্পিউটার বেজ রেলওয়ে ইন্টারলক সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ।

ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের ফিন্যান্সিং এগ্রিমেন্টের বাণিজ্যিক চুক্তি মূল্যের ৮৫ শতাংশ প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সম্পন্ন হবে এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যা পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংককে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়।

প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়, বাণিজ্যিক মূল্যের ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে চীনা এস্টেট কাউন্সিলের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে অর্থায়ন প্রক্রিয়া করতে ৩-৬ মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সুদের হার আড়াই শতাংশ হবে। কেননা পিবিসি কোটা সংগ্রহের জন্য চীন সরকারকে ওপেন মার্কেট থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু চীনের এ দুটি বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। পরবর্তীতে আলাপ-আলোচনার পর আগের নিয়ম অনুযায়ী ২ শতাংশ সুদ এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়ন এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চলতি বছর (২০১৭ সালে) প্রকল্পটিতে অর্থায়নের অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর বাংলাদেশের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে চীনা এক্সিম ব্যাংক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সড়ক সেতু চালুর দিন থেকেই রেল চলাচলও উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রেল মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে বলা হয়েছিল ২০১৯ সালে পদ্মায় রেল সেতু উদ্বোধন করতে হলে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করতে হবে।

তাতে আরও বলা হয়েছিল, মে-জুন মাস থেকে বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করতে হবে। না হলে পদ্মা সড়ক ও রেল সেতু এক সাথে উদ্বোধন করা সম্ভবপর হবে না।

২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারের এই মেয়াদে অর্থাৎ এই বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারের আশা প্রকাশ করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, “জানুয়ারি ২০১৭ হতে কাজ শুরু করে এ বছরের শুকনো মৌসুমের মধ্যে আড়িয়াল খাঁ সেতুসহ অন্যান্য রেলসেতুর ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা সম্ভব না হলে পদ্মা সেতু চালুর দিন হতে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এরই মধ্যে রেলের চুক্তি না হওয়ায় এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর ইআরডির কাছে চিঠি পাঠিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই চীন সফরের উদ্যোগ নেওয়া হল।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security