রবিবার, এপ্রিল ১৪, ২০২৪

বিদ্যুতের দাম কমানোর শুনানি চায় ভোক্তারা

যা যা মিস করেছেন

বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নয় কমানোর শুনানি চেয়েছে ভোক্তা প্রতিনিধিরা।

Image result for বিদ্যুতের দাম কমানোর শুনানি চায় ভোক্তারা

সোমবার বিদ্যুতের দাম পুনঃনির্ধারণে গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেখানে ভোক্তা পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পাইকারি (বাল্ক) মূল্য প্রতি ইউনিট শূন্য দশমিক ৮৭ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিইআরসি কারিগরি মূ্ল্যায়ন কমিটি মতে পাইকারি মূল্যহার বৃদ্ধি প্রয়োজন ইউনিট প্রতি শূন্য দশমিক ৫৭ পয়সা।

বিপিডিবি ও বিইআরসির তথ্য উপস্থাপনের পর কথা বলেন ভোক্তা প্রতিনিধিরা।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম সামসুল আলম প্রায় এক ঘণ্টা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে দেখান যে বর্তমানে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। বরং উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের একটি হিসাব দেখিয়ে বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের বিদ্যমান মূল্যহার ৪.৯০। এ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ০.৭২ টাকা। এ বৃদ্ধির উপাদানভিত্তিক বিভাজন: বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল বাবদ ২৬ পয়সা, ভর্তুকিকে লোন ধরায় সে লোনের সুদ বাবদ ২১ পয়সা এবং বিইআরসির নির্দেশনা মতে ফার্নেসওয়েলের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহার হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি ১৪ পয়সা এখানে (বিপিডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয় ৯ পয়সা)। মোট ৬১ পয়সা, এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন বিদ্যুৎ ইন্নয়ন তহবিলের অর্থের ব্যবহার না থাকায় সে অর্থ ‘নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে’ ধার দেয়া হচ্ছে। স্বল্প ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে বিইআরসির আদেশ প্রতিপালিত হয়নি। কেন হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন ব্যর্থতার দায় কেন জনগণ নেবে।

কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিডি) নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জনস্বার্থ পরিপন্থি কাজ হবে বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ালে। বরং কীভাবে বিদ্যুতের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে গণশুনানি হওয়া দরকার। যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। বন্যা, রোহিঙ্গা ইস্যু, হাওরে বিপর্যয় নিয়ে দেশের মানুষ যখন দিশেহারা তখন এমন এক শুনানি জনস্বার্থবিরোধী।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মন্ত্রণালকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাতিল করতে হবে।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরা কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে বাড়ি ভাড়া ভাড়াসহ প্রতিটি জিনিসের দামই বেড়ে যায়। দেখা যায় বিদ্যুতের দাম বাড়ল ৩০ টাকা, কিন্তু বাড়ি ভাড়া বাড়ে ৩০০ টাকা।

 

মাহমুদুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বিপিডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাইবান্ধায় বিপিডিবির লোকের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে।

সালেক সুফি নামের এক গ্রাহক বলেন, আমাদের উত্তরাতে গ্যাস থাকে না, দিনে বিদ্যুতে লোডশেডিং হয় দুই ঘণ্টা। এরপর আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা। আমাদের বাঁচান, বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর যুক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিদ্যুত বিল আদায় না করতে পারা, বিইআরসির প্রতি বছর ট্যারিফ সমন্বয় করতে না পারার দায় কেন সাধারণ গ্রাহকরা নেবে।

এদিকে যখন গণশুনানি চলছে তখন ভবনের বাইরে মানববন্ধন করে গণমোর্চা ও বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টি (বিডিপি)। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় এখন বিভিন্ন কারণে সংকটময় পরিস্থিতি চলছে দেশে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনবে। বিদ্যুতের দাম যৌক্তিরভাবে কমানো উচিত। অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ওপর গণশুনানির প্রয়োজন নেই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যন মনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পক্ষ থেকে তাদের দাবি উপস্থাপন করেন মহাব্যবস্থাপক বিপিডিবি কাওসার আমির আলি। কারিগরিক মূল্যায়ন তুলে ধরেন বিইআরসির কারিগরিক মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামান।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাল্ক সরবরাহ ব্যয় ইউনিট প্রতি ৫.৫৯ টাকা, গড় বাল্ক ট্যারিফ ইউনিট প্রতি টাকা ৪.৮৭ যা প্রতি ট্যারিফ ঘাটতির ব্যবধান ০.৭২ টাকা। ট্যারিফ ঘাটতির জন্য ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে বল্প ট্যারিফ টাকা ০.৭২ বৃদ্ধির প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাল্ক সরবরাহ ব্যয় ইউনিট প্রতি ৫.৭২ টাকা যার বিপরীতে বর্তমান গড় বাল্ক ট্যারিফ ইউনিট প্রতি টাকা ৪.৮৫ অর্থাৎ ইউনিট প্রতি ট্যারিফ ঘাটতি ০.৮৭ টাকা। যেহেতু ইতোমধ্যেই ২০১৬-১৭ অতিক্রান্ত হয়েছে তাই ২০১৭-১৮ প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তিতে ট্যারিফ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ছাড়াও বাকি পাঁচ বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। আগামীকাল একই জায়গায় গণশুনানি হবে বিপিডিবির খুচরা মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের ওপর।

বিইআরসি আইন ২০০৩ অনুযায়ী, গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বিইআরসি। এর আগে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার ও খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security