সোমবার, এপ্রিল ১৫, ২০২৪

পরিস্থিতি ঠেকাতে ফের বিধিনিষেধ

যা যা মিস করেছেন

খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের

দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে ১০ হাজারের বেশি। সংক্রমণের লাগাম টানতে পাঁচ দফা জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দুই সপ্তাহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল-কলেজ। অনলাইনে ক্লাস চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। অফিস-আদালত অর্ধেক জনবল দিয়ে চালানোর জন্য আসছে আরেক দফা নির্দেশনা।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব সাবিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পাঁচটি জরুরি নির্দেশনা জারি করা হয়। এগুলো হলো- ২১ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাষ্ট্রীয়/সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় অনুষ্ঠান ১০০ জনের বেশি নিয়ে করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট/২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দায়িত্ব বহন করবেন। বাজার, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রশাসন/আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি মনিটর করবে।

খুলে দেওয়ার মাত্র চার মাস পর ফের তালা ঝুলল দেশের স্কুল-কলেজগুলোয়। সরকারের এমন নির্দেশনা পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সশরীরে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে এখন অনলাইনেই চলবে পাঠদান কার্যক্রম। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রাবাস খোলা রাখা হয়েছে। গতকাল বিকালে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধ থাকবে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বন্ধ করা হয় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে সেগুলো। করোনা সংক্রমণ কমলে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘ দেড় বছর পর খুলে দেওয়া হলেও প্রতিদিন ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেওয়া হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে মাত্র এক দিন ক্লাসের আয়োজন করা হয়। আর প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাসেরই ব্যবস্থা ছিল না। স্কুল, কলেজের পর ধাপে ধাপে খুলতে শুরু করে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মাত্র চার মাস পার হওয়ার পরই ফের ছন্দপতন ঘটল শিক্ষাসূচিতে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন গতকাল বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইনে পাঠদান ও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। আগের মতো টেলিভিশনের ক্লাসও চালু করা হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে মাউশি অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশের স্কুল-কলেজের জন্য নির্দেশনা জারি করা হবে।’ স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশনা আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সশরীরে ক্লাস বন্ধের নির্দেশনা জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। বুয়েটসূত্র জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক শ্রেণির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১, টার্ম-১-এর ক্লাস আজ (২২ জানুয়ারি) অনলাইনে শুরু হবে। একইভাবে সশরীরে পাঠদান বন্ধ রেখে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত এসব পরীক্ষার সংশোধিত তারিখ ও সময় পরে জানানো হবে। গতকাল বিকালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক সভায় যোগদানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের মাঠের চিত্রের ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজগুলোয় সশরীরের ক্লাস বন্ধ করা হয়েছে। এখন অনলাইনে পাঠদান ও অ্যাসাইনমেন্টের চেষ্টা করব। যখনই মনে হবে ক্লাসে ফেরা সম্ভব, তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোচিংগুলোও বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঝেমধ্যে ছুটি ভালো লাগে। লম্বা ছুটি কারও ভালো লাগে না। শিক্ষার্থীদেরও ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু মহামারির কারণে শিক্ষার অনেক নিয়মে ছেদ পড়েছে।’ গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অর্ধেক লোক নিয়ে অফিস-আদালতের কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা খুব শিগগির প্রজ্ঞাপন আকারে চলে আসবে। গণপরিবহনে যাতে ভোগান্তি না হয় সেজন্য অর্ধেক লোক দিয়ে অফিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোয় ৩৩ শতাংশ শয্যা এরই মধ্যে পূর্ণ হয়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী দুই সপ্তাহ স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবে না। যারা অংশ নেবেন তাদের সবার টিকা সনদ থাকতে হবে। এগুলো কার্যকরের চেষ্টা চলছে। সংক্রমণ যাতে কমে সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত। পরিবার, দেশ ও নিজের সুরক্ষার জন্য আমাদের নিয়মগুলো মানতে হবে। সরকার বিধিনিষেধ দেয় যাতে আমরা তা মেনে চলি।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গেলে টিকা সনদের পাশাপাশি করোনা টেস্টের সনদও লাগবে। এগুলো বইমেলায়ও দেখাতে হবে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বইমেলা পেছানো হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতোই আমরাও চলমান পরিস্থিতির বাইরে নই।’ দেশের ১২ কোটি মানুষকে কভিড টিকার আওতায় আনার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নিয়েছে তার কাছাকাছি পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল অধিদফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৯ কোটি ২৪ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৮০ লাখ ৫ হাজার ২৫৯ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার ৯০৯ জন টিকা পেয়েছে। ১ কোটি ২৯ লাখ কিশোর-কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অচিরেই পূরণ হবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ছাড়া ষাটোর্ধ্ব, সম্মুখসারির কর্মী ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হচ্ছে কভিড টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজারের বেশি। মহামারি মোকাবিলায় জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষকে দেওয়া হবে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ীই দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এটা কমানো হয়নি। আমাদের টার্গেট ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া। ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা ছিল সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া। সেটা আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ। আমাদের দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ দেশের বাইরে আছেন। তাদের কেউ কেউ আমাদের এখান থেকে টিকা নিয়ে যান, আবার বিদেশ থেকে কেউ কেউ টিকা নিয়ে আসেন। সে হিসেবে আমরা যে লক্ষ্যের কথা বলেছি তা ঠিক আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই সংখ্যা ধরে এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছি। প্রথম ডোজ দিয়েছি ৯ কোটি ২৪ লাখ, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ। আমাদের হাতে আরও প্রায় ৯ কোটি ডোজ টিকা রয়েছে। সবাই (লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী) টিকা পাবেন এমন টিকা মজুদ রয়েছে।’

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security