পান্না কুমার রায় রজত : দেখতে দেখতে করোনার সঙ্গে মানুষের যুদ্ধের একবছর অতিক্রান্ত হয়েছে। শীতের উৎফুল্লতা, ভোরের হিমেল হাওয়া, ধূসর কুয়াশায় ঢাকা, অলি-গলি, পাড়ায়-পাড়ায় শিশুদের চোখে-মুখে হাসি, পাতার ওপর শিশিরের বিন্দু বিন্দু জল আর রঙহীন রাস্তার রঙিন মানুষগুলোর অনুপস্হিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় পুরো মানব সমাজের বন্দী জীবনের কথা।
আনন্দ নির্মাণের মুহূর্ত এক সৃষ্টি প্রক্রিয়া, এতে মানবিক বিকাশকে উন্নততর করার আকাঙ্খা অনুভূত হয়। অচলায়তনের মতো রক্ষণশীলতার পরিমন্ডলে আবদ্ধ থাকেননি কেউই, না লেখক না পাঠক না শিল্পী।
কর্পোরেট দুনিয়া মানুষকে স্বার্থপর করে দেয়। শুধু নিজের ভাল,নিজের উন্নতি, নিজের সুখ, নিজের ধর্ণাঢ্য জীবন, কিন্তু আমরা ’নেত্র বন্ধন-৯১’ অসীম অাকাশ বিশাল সমুদ্র। আমাদের আছে আবেগ ভালোবাসা আর ভাবনা। তাইতো গত গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) আমরা হৃদয়ের বন্ধনে সারাদিনের জন্য মিলিত হয়েছিলাম নেত্রকোনায় বন্ধু নাজুর মৎস্য খামারে।
ঢাকা থেকে আমাদের চাররত্ন বন্ধু লিটন, স্বপন, রিপন ও মণির শীতের চাদরকে ঠেলে রঙিন ক্যানভাসে আবির্ভাব ঘটায় আনন্দের ফোয়ারায়। জীবন ও শিল্পের প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্যে সদূর দিনাজপুর থেকে ছুটে আসে বন্ধু নূসরাত পারভিন সোমা। চেতনায় আশার সঞ্চার ঘটায় ময়মনসিংহ থেকে আ ত্রিপল ফ্রেন্ড একই পেশায় বন্ধু ফারুক, মান্না ও নুরুল হক এবং ব্যস্ততার মাঝেও বন্ধু হারুণ।
বিশেষ খবর হলো আগে থেকে তিন বান্ধবী প্রস্তুত হয়ে আছে মিলন মেলাকে উদ্ভাসিত মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়ার জন্য চমন, শোভনা ও পান্না। ৬০ জন বন্ধুর উপস্হিতিতে আনন্দের বিস্তৃতি ছিল অসম্ভব সুন্দর।
ফাটাফাটি হাসিতে সারাদিন পূর্ণ রাখে বন্ধু ডাঃ গণি। আর গানে মাতোয়ারা করে রাখে রাসেল রাসু ও গোল্ডেন জুলহাস। সার্বিক সঞ্চালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে বন্ধু ফারুক, নাজমুল ও নজরুল। ক্যামেরা নিয়ে গোয়েন্দাগিরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছে বন্ধু সাখাওয়াত।
বন্ধুদের মুখরিত ধ্বনিতে ওইদিন প্রকৃতি ও যেন আমাদেরকে উজাড় করে দিয়েছে। গাছপালা আর পুকুরে সুসজ্জিত খামারের পাখিগুলো যেন নীরবে আমাদের জন্য জায়গাটুকু রেখে সারাদিনের জন্য চলে গিয়েছে দূরে।
দুপুরের প্যাকেট খাবার তারপর রাফেল ড্র, হওয়ার পর গান বাজনায় মাতোয়ারায় ভালোই লাগছিল সকলের। কিন্তু, সূর্য পশ্চিমাকাশে আবীর রঙ হয়ে যখন হেলে যাচ্ছে তখন সকলেই নীরব হয়ে গেলাম। মনে পড়ল সময় তো শেষ, চলে যেতে হবে যে।
সকলেই একত্রে নীড়ে ফেরার জন্য বিদায় জানালাম প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা বন্ধু নাজুর মৎস্য খামার। আমাদের অন্তর কোমল। এমনকি বাণিজ্যিক সমাজে ও যেখানে অনুভূতিগুলো পণ্য ছাড়া কিছুই না সেখানে আমদের ‘নেত্র বন্ধন-৯১’ সকলের চোখে ছিল উদ্ভাসিত প্রত্যাশা ও মুগ্ধতার অনুভব।