জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী রোববার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। অধিবেশনের প্রথম দিনে শোক প্রস্তাব ও অধ্যাদেশ উত্থাপন করা হবে। পরদিন ৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। ওই দিন অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন ও তার অবদান নিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার পর এই বক্তৃতার উপরে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলগুলোর সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন ।
এই বিশেষ অধিবেশনের সাথেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ অধিবেশনও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে হলেও এই বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে গোটা সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
চার দিনের বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরা হবে।
মুজিববর্ষের এই বিশেষ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এ জন্য বাড়তি প্রস্ততিও নেওয়া হচ্ছে। সংসদের এই দশম অধিবেশন ১০ কার্যদিবস চলতে পারে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশন চলবে ৯ থেকে ১২ নভেম্বর ৪ কার্যদিবস। অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর নিয়মিত সাধারণ অধিবেশন চলবে। আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই অধিবেশন চলার সম্ভাবনা রয়েছে। অধিবেশনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হবে।
শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অধিবেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য দেখানো হবে না। বিশেষ অধিবেশন হবে ৪ দিন। ৯ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন। অধিবেশনের আলোচনা, সাজসজ্জা ও প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দর্শন, রাজনৈতিক জীবন এবং সর্বপরি মহান এই নেতার বর্ণাঢ্য জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হবে। চারদিনের বিশেষ আলোচনা শেষে পরে অধিবেশনের সাধারণ কার্যক্রম চলবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমন্ত্রণ সীমিত রাখা হয়েছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২২ ও ২৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি ও অধিবেশন আহ্বান করাও হয়েছিলো। ওই অধিবেশনে বিদেশি অতিথিদেরও আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অধিবেশন স্থগিত করেন রাষ্ট্রপতি। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুনরায় নতুন করে এই অধিবেশন ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র আরও জানায়, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে। অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য সংসদ সদসদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা চলছে। যারা করোনা নেগেটিভ হবেন তারাই শুধু অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। এই অধিবেশনেও বিশেষভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকতে পারবেন। সে অনুযায়ী রোস্টার করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার দিন ৯ নভেম্বর করোনা নেগেটিভ সব সংসদ সদস্য অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। এদিন প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যসহ সীমিত পরিসরে আমন্ত্রিত অতিথিরা সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত থাকবেন।
অধিবেশনে একদিনের জন্য অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ৯ নভেম্বর ভাষণ দেবেন, সেদিন সাংবাদিকরা সংসদ ভবনে যেতে পারবেন। এ জন্য সংসদ বিটের প্রতি প্রতিষ্ঠানের একজন করে রিপোর্টারকে সংসদ সচিবালয় থেকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। যারা নেগেটিভ হবেন তারাই ভবনে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কোভিড-১৯ পরীক্ষা চলছে।
বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকারের আসনের পেছনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টানানো হয়েছে। সংসদ ভবনের লেকে ভাসানো হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন দুটি পাল তোলা নৌকা। এই পাল তোলা নৌকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। সংসদ লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ বাণী নিয়ে আলো-ছায়ার দৃষ্টিনন্দন কোলাজ করা হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে প্যান্ডেল করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিলে পাকিস্তানের গণপরিষদ, স্বাধীন দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদে বঙ্গবন্ধুর কাজগুলো ফোকাস করা হবে। একটি রাষ্ট্রের জন্ম, সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু যা যা করেছেন তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বক্তব্যও বাজানো হবে। এছাড়া সংসদ ভবনের ভিতরে-বাইরে আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে।
এই অধিবেশনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০ পাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের পর গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করেন। এর আগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১২ অক্টোবর অধ্যাদেশটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। এছাড়া সংসদে ১১টি বিল পাস ও উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) বিল-২০২০’ রয়েছে।
দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়