বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর স্ত্রীকে চেনেন না স্বামী

যা যা মিস করেছেন

সুরুজ মিয়া (২৫) নামে এক যুবক তিন বছর আগে কিশোরগঞ্জ জেলার একটি মেয়ের সাথে মোবাইলে প্রেমের সর্ম্পক করে তাকে বিয়ে করেন। ঘর ভাড়া করে সংসারও শুরু করেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই যুবক মেয়েটিকে ফেলে পালিয়ে যান।

মেয়েটির অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে স্বামীর খোঁজ পান তিনি। জমিতে ঘর তোলার জন্য তাকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে বলেন স্বামী। সেই টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন তাকে স্ত্রী বলে মানতে রাজি নন স্বামী। স্বামীর আগে স্ত্রী ও সন্তান আছে, সেটাও জানতেন না মেয়েটি। প্রতারণার ঘটনাটি জানিয়ে গত শনিবার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই মেয়েটি।

অভিযোগকারী মেয়েটি এখন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউপির নারী সদস্য হেলেনা বেওয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতারক সুরুজ মিয়া (২৫) বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জোয়ালমাঠা গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি বড় হয়েছেন নানার বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার চাপাগাছি হরিপুর গ্রামে।

মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের বাড়িতে থাকার সময় তিন বছর আগে তার মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। নম্বরটি ছিল সুরুজ মিয়ার। মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয় দু’জনের। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। এরপরে মেয়েটি তার প্রেমিকের নাম–ঠিকানা নেন। ঠিকানা অনুযায়ী তিনি দুই বছর আগে ঢাকার সাভারে গ্যারেজ এলাকায় সুরুজ মিয়ার কাছে চলে আসেন। সেখানে সুরুজ মিয়া একটি রিকশার গ্যারেজে কাজ করতেন। তারা দুজনে বিয়ে করে গ্যারেজ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। তবে মেয়েটিকে সুরুজ মিয়ে কখনো নিজের গ্রামে নিয়ে যাননি বা পরিবারের কারও সঙ্গে পরিচয়ও করাননি। একবার আক্কেলপুরে নানীর বাড়ি এলাকায় নিয়ে গেলেও স্ত্রীকে তোলেন এক বন্ধুর বাসায়। স্বামীর বাড়ি কোন গ্রামে, সেটিও তিনি জানতেন না। গত চার মাস আগে মেয়েটি তার স্বামী সুরুজকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। মেয়েটির পরিবারের সবাই তাদের বিয়েটা মেনে নেন। কিছুদিন সুরুজ মিয়া তার শ্বশুড় বাড়িতে থাকার পরে হুট করেই চলে যান। এরপর থেকে সুরুজকে আর মুঠোফোনে পাচ্ছিলেন না তিনি। এক পর্যায়ে গত জুলাই মাসে সুরুজকে মুঠোফোনে পান তিনি। সুরুজ তাকে জানান, বাড়িতে কেউ তাকে মেনে নেবে না। এ কারণে বাড়ি করার জন্য জায়গা কিনতে হবে। বাড়ির জায়গা কেনার জন্য এক লাখ টাকা চান। সুরুজ মিয়া তাকে মুঠোফোনে জায়গার মালিকের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেন। এর পর মেয়েটি স্বামীর কথায় বিশ্বাস করে প্রথমে বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা দেন। গত ৭ আগস্ট তিনি বাবার বাড়ি থেকে আরও ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নিয়ে স্বামীর কথামতো আক্কেলপুর উপজেলায় আসেন। এরপর স্বামী তাকে বগুড়া জেলার দূপচাঁচিয়া উপজেলার মর্তুজাপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে তোলেন। তিনি কে প্রতিবেশীরা সেই প্রশ্ন তোলায় ৯ আগস্ট তাকে নিয়ে সাভারে ভাড়া বাসায় চলে আসেন সুরুজ মিয়া। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু সম্রাট ও লিটন। ওই সময়ও তিনি জানতেন না, স্বামীর আগে থেকেই স্ত্রী ও সন্তান আছে।

এরপর সাভারের ভাড়া বাসায় মেয়েটিকে একা রেখেই সুরুজ মিয়ে আক্কেলপুর উপজেলায় তার নানীর বাড়িতে চলে আসেন। পরে তরুণী মোবাইলে সুরুজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে আসতে বলেন। এরপর মেয়েটি গত শুক্রবার রাত নয়টার দিকে গোপীনাথপুরের কড়ইতলা এলাকায় বাস থেকে নামেন। সেখানে তার স্বামী সুরুজ মিয়া, সম্রাট ও লিটন থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাস থেকে নামার পর তাদের কাউকে সেখানে দেখতে পাননি তিনি। মুঠোফোনে সুরুজের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি সম্রাটের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। রাতে মেয়েটি এভাবে দিকভ্রান্ত অবস্থায় দেখে টহল পুলিশ তাকে সেখান থেকে নিয়ে গোপীনাথপুর ইউপির সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য হেলেনা বেওয়ার বাড়িতে নিয়ে যান।

নারী ইউপি সদস্য হেলেনা বেওয়া মেয়েটিকে আশ্রয় দেওয়ায় সুরুজ মিয়া ও তার সহযোগিরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন তিনিও মেয়েটিকে তার কাছে রাখতে চাইছেন না। বাড়ি করার জন্য জায়গা কেনা বাবদ স্বামীকে দেওয়া এক লাখ টাকা ফেরত না পেলে মেয়েটিকে বাড়ি ফিরতে মানা করেছেন বাড়ির লোকজন। তাই তিনি এখন কোথায় যাবেন, এ নিয়ে দিশেহারা বোধ করছেন।

মেয়েটি বলেন, আমি গত শনিবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরদিন রোববার থানার একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কথা বলে চলে যান। এরপর তার স্বামী ও তার বন্ধুরা ইউপি সদস্যের বাড়িতে এসে তাকে গালিগলাজ করে যান।

তিনি বলেন, সুরুজ আমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছে না। তাকে দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে বাবার বাড়িও যেতে পারছি না। আমাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ইউপি সদস্য হেলেনা বেওয়া অপদস্ত হচ্ছেন। পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি এখন কী করব?’

ইউপি সদস্য হেলেনা বেওয়া বলেন, সুরুজের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে, এটাও মেয়েটি জানতেন না। সুরুজ মেয়েটিকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকারও করছেন না। যেন চেনেনই না। রাতে মেয়েটি কোথাও যেতে পারছিলেন না বলে টহল পুলিশ তার জিম্মায় দিয়ে গেছে। চার দিন ধরে আমার বাড়িতে আছে। মেয়েটিকে আশ্রয় দেওয়ায় সুরুজ, সম্রাট ও লিটন বাড়িতে এসে আমাকে গালিগলাজ করেছেন। আমি আর মেয়েটিকে রাখতে চাইছি না। ওসি সাহেবও মেয়েটির বিষয়ে কিছুই করছেন না।

অভিযুক্ত সুরুজ মিয়া ও সম্রাটের এলাকায় গিয়ে খোঁজ করে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁদের মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ খান বলেন, মেয়েটির অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। যেহেতু এখানে তার কেউ নেই, তাই তাকে বাবার বাড়িতে চলে যেতে বলেছি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security