বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১১, ২০২৪

ব্যাংক লুট রোধে সামাজিক আন্দোলন জরুরি

যা যা মিস করেছেন

অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে যেতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও নৈতিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া দুর্নীতি ও ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে শুধু আইনগত ব্যবস্থা দিয়ে কিছু হবে না। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জরুরি।

রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল হক খন্দকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান প্রমুখ।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংকের টাকা লুট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুধু আইন প্রয়োগই যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় উন্নয়ন টেকসই ও বেগবান করা যাবে না।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে এ উন্নয়ন আরও টেকসই ও বেগবান হবে।

এজন্য সুশাসন ও উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ ছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক দলনির্ভর সরকার ব্যবস্থা, রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন না থাকা উন্নয়নের পথে বড় বাধা। সন্তোষজনক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো গড়ে উঠছে না।

বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টের দিকে তাকালে তা সহজেই বোঝা যায়। এসব সূচকে উন্নতি করতে হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি কমাতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কারের কথা ভাবতে হবে।

‘কৃষির বাইরে অর্থনীতিতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা হল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা, বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের রেমিটেন্স এবং নারী শ্রমিকদের স্বল্প মজুরিতে উৎপাদিত তৈরি পোশাক। পরবর্তী ধাপে যেতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন আছে। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে স্কিল বাড়াতে হবে। নিম্ন প্রযুক্তি ও কম মজুরির উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে তো দারিদ্র্য দূর হবে না।’

ওয়াহিদ উদ্দিন আরও বলেন, জনমিতির সুফল কাজে লাগাতে হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তাদের দক্ষ করতে হলে শিক্ষার কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষার প্রসার হয়েছে, কিন্তু গুণগত মান বাড়েনি।

এটা করতে না পারলে জনমিতির সুবিধা কাজে লাগানো যাবে না। পাশাপাশি উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যাওয়াও হবে না। সর্বোপরি আমরা জ্ঞানভিত্তিক যে অর্থনীতির কথা বলছি সেখানে যেতে পারব না।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তরুণ গবেষকদের বর্তমান সমস্যাগুলো বুঝে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপনের এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। যেসব বিষয় ও সূচক নিয়ে এখন অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করছেন এর বাইরে কিছু বাদ পড়ছে কিনা সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

বর্তমানে শ্রম খাতের ৮৮ শতাংশ রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। উন্নয়ন করতে হলে তাদের ইনফরমাল থেকে ফরমাল শ্রমবাজারের দিকে নিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির ছাত্র ও শিক্ষকরা এখন নতুন নতুন অর্থনৈতিক ইস্যুর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য শুভ মুহূর্ত।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠাকি না হলেও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এই উন্নয়ন বেশিদিন টেকসই হবে না। আর্থিক খাতে সংস্কার, কর কাঠামো উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি।

দুর্নীতি প্রতিরোধেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে হবে। চলমান সংস্কারগুলো কার্যকর করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। ডুয়িং বিজনেস পরিবেশ উন্নয়ন ঘটিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাছাড়া ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা বিনিয়োগকারীদের নিরুসাহিত করে।

বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে গিয়ে অনেক সময় ঋণ পান না। আবার পেলেও নিতে সাহস পান না। কেননা ঋণ নিলেই তো তা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু যে ঋণ সে নিচ্ছে সেটি কাজে লাগাতে পারবে কিনা। এমন সংশয় দূর করতে হবে।

দিনব্যাপী বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নেন, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী, অস্টেলিয়ার গ্রাফিথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আইয়ানাতুল ইসলাম, সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

দু’দিনের সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, শ্রমবাজার, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ে ৬৫ জন গবেষক তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করবেন। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালের ২৬ জন গবেষক অংশ নিয়েছেন। আজ দ্বিতীয় দিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security