...
বুধবার, মে ১৫, ২০২৪

করোনাভাইরাস ঠেকাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ সরকার

যা যা মিস করেছেন

দেশের কোথাও রোগী পেলে দ্রুত জানানোর নির্দেশ ডিসি-এসপিদেও * ওষুধসামগ্রী ও কিটস প্রস্তুত রাখা হয়েছে * সার্চের মতো ভয়াবহ নয় করোনাভাইরাস -স্বাস্থ্যমন্ত্রী * চীন থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু -পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী * বিস্তার প্রতিরোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে -ভিসি বিএসএমএমইউ * নজরদারিতে পদ্মা সেতু প্রকল্প ও পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত চীনা নাগরিকরা

চীনে ছড়িয়ে পড়া নতুন (2019-nCoV) করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে রোগটি ১৩ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়নি।

দেশের সব হাসপাতালে পাঁচ শয্যার বিশেষ ইউনিট খোলা হয়েছে। চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। করোনা গোত্রের এই ভাইরাসটি সংক্রামক হলেও সার্চের মতো ভয়াবহ নয়। কাজেই দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে খুব জরুরি না হলে কিছু দিন চীন ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেন তিনি।

নতুন এ ভাইরাস প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ধরনের রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্থলবন্দরসহ সবকটি প্রবেশপথেই স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, চীনের উহান সিটিতে ৩১৭ জন শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্ত চীন সরকার ১৪ দিনের মধ্যে সেখান থেকে কাউকে বের না হওয়ার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আপাতত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে আনা যাচ্ছে না।

৬ ফেব্রুয়ারি এই ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। ১৪ দিনের নির্ধারিত সময় শেষ হলেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চীনে যাতায়াত প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাণিজ্যিকভাবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুবিধ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো দেশ চীনের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বন্ধ করেনি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়নি। কাজেই চীনের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা স্থগিত রাখার কোনো চিন্তা সরকারের নেই। তবে যারা বিভিন্ন কারণে নিয়মিত চীনে যাতায়াত করেন, তাদের প্রতি পরামর্শ- সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। তাই এখনই চীন ভ্রমণ না করে কিছুদিন পরে ভ্রমণ করাই ভালো হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে- ভাইরাসটি দেশে প্রবেশ ঠেকাতে সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে মনিটরিং করা হচ্ছে। এসব স্থানে থারমাল স্ক্যানারের পাশাপাশি, পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্ক্যানারও সরবরাহ করা হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। সিভিল অ্যাভিয়েশন সার্বক্ষণিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করছে।

চীন থেকে যারা আসছেন, তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ১৫ দিনে চীন থেকে ২৮০৫ জন যাত্রী দেশে এসেছে। এদের স্ক্যান করা হয়েছে, এখন নজরদারিতে আছেন। তাদের বৃত্তান্ত রাখা হয়েছে এবং শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা দিয়েছে কি না, সেটি নিয়মিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এ সময় বিমানের পরিচালক জানান, চীন থেকে প্রতিদিনই ৪টি ফ্লাইট বাংলাদেশে আসে।

মন্ত্রী জানান, অপরটি হচ্ছে নতুন এ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এ বিষয়ে ১২ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি ম্যানেজম্যান্ট প্রটোকল প্রকাশ করেছে। যা ইতিমধ্যে সারাদেশের চিকিৎসকদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। দেশের যে কোনো জেলায় রোগী পাওয়া গেলে যেন সেই প্রটোকল অনুযায়ী তার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়, সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তারা যেসব এলাকায় থাকেন, সেসব এলাকায় বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। তবে বেশি নজরদারি রাখা হচ্ছে বিমানবন্দরে। এই সময় যারা চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন, তাদেরও ১৪ দিন নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রাজধানীর একটি বেসরকরি হাসপাতালে একজন চীনা নাগরিক সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বর্তমানে সুস্থ, বাড়িতে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। তবে তাকেও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

বিস্তার রোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাস প্রতিরোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার রোধে করণীয় ও প্রস্তুতি নিয়ে এক জরুরি বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ও প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সময়োপযোগী গাইডলাইন তৈরির লক্ষ্যে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে ও সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শে থাকা যাবে না। দেশের বাইরে থেকে কেউ এলে দু’সপ্তাহ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ ছাড়া কাঁচাবাজারে পশু-পাখির মাংস ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাংস ধরলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মাংস ধরে হাত না ধুয়ে মুখমণ্ডল স্পর্শ করা যাবে না। মাংস ও ডিম ভালো করে সেদ্ধ ও রান্না করতে হবে। পোষ্যপ্রাণীর সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।

ঔষধ প্রশাসনের বিশেষ প্রস্তুতি : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। মঙ্গলবার অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাজারে ডিসপোজেবল ফেস মাস্কের সরবরাহ বৃদ্ধি, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশনা প্রদান। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে ফেস মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার কি পরিমাণ মজুদ আছে তা জানানোর জন্য বলা হয়।

রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সবাইকে অধিক সতর্ক হতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ রোগে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে কিডনি, হার্ট ও লিভার অকেজো হয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেটেড থাকতে হবে। এ ছাড়া তরল ও পুষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

চীন থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু : চীন থেকে ফিরে আসতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে জানা যাবে কতজন দেশে আসতে চান। এরপর সেখানে পাঠানোর জন্য বিমান নির্ধারণ করবে সরকার।

তবে আগ্রহীদের দেশে ফেরানোর এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত চীনে যারা আছেন, তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। মঙ্গলবার বিকালে নিজের ফেসবুক পেজে এ বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। চীন থেকে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ফেরানোর সবশেষ আপডেট ও করণীয় জানিয়ে বার্তাটি দেন তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মীদের ওপর বিশেষ নজরদারি : পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মীদের মধ্যে যারা ছুটি কাটাতে চীনে গেছেন, আপাতত তাদের বাংলাদেশে ফেরা বন্ধ করা হয়েছে। আবার চীনা কর্মীদের মধ্যে যারা প্রকল্প এলাকায় রয়েছেন তাদের কেউ যেন চীনে যেতে না পারেন সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান আবদুল কাদের এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনেক চীনা প্রকৌশলী ও কর্মী রয়েছেন। তবে দেশি-বিদেশি কোনো কর্মী এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সিনিয়র অকুপেশনাল অ্যান্ড হেলথ স্পেশালিস্ট মাহমুদ হোসেন ফারুক। তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কোনো কর্মী আক্রান্ত নন। এ ছাড়া পটুয়াখালীর কলাপাড়ার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত চীনা নাগরিকদের সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার চীনা নাগরিক কর্মরত।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.