বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৮, ২০২৪

সব বাঁধা পেরিয়ে এসএসসি পাস করেছে ফেরদৌস,এখন কলেজে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা

যা যা মিস করেছেন

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি –

ফেরদৌস আহমেদ ১৭। চেহারায় এখনো শৈশবের ছাপ। ১১ বছর আগেই তাকে ফেলে রেখে বাবা-মা চলে যাওয়ার মতো নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। বাবা-মা ছেড়ে যাওয়ার পর আর কোথাও ঠাঁই না হলেও বৃদ্ধ দাদীর আঁচলে ঠাঁই মিলেছিল। সেখানে কষ্টে বড় হলে একসময় বৃদ্ধ দাদিও অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের অভাব ঘোচাতে অপ্রাপ্ত বয়সেই রাজমিস্ত্রির কাজসহ মুদি দোকান চালিয়ে সংসার চালিয়েছে। অভাবের মধ্যে কোনোমতে পড়ালেখা চালিয়ে যায়। এভাবে শত বাঁধা-প্রতিকূলতা জয় করে পড়াশোনা করে ফেরদৌস এবার মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৩ দশমিক ৬১ পেয়েছে। তবে কলেজ পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে তাঁর।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের মুক্তারপাড়া এলাকায় বসবাস ফেরদৌসের। দুই ভাই ও এক বোনের মাঝে সে দ্বিতীয়। মুক্তার পাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন ও রুবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে হলেও বর্তমানে তাঁর ঠিকানা ও আপনজন বলতে শুধু দাদি মিলিক জান বেগম। ফেরদৌস আহমেদ সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল। গত রবিবার প্রকাশিত ফলাফলে মানবিক বিভাগ থেকে সে ৩.৬১ পেয়েছে উত্তীর্ণ হয়েছে।

জানা গেছে,প্রায় ১১ বছর আগে ফেরদৌস আহমেদের বাবা আনোয়ার হোসেন তাঁকে ফেলে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। এ কথা শুনার পর মাও তাঁকে ফেলে বাপের বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে ফেরদৌসের শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। তাঁর ঠাঁই মিলে বৃদ্ধ দাদি মিলিক জান বেগমের কাছে। ছোটবেলা থেকেই ফেরদৌস পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ থাকায় চর মোক্তারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। দাদি ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলে ভর্তির সুযোগ মেলে। সেখানেও পড়াশোনা খরচ মিলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল তাঁর দাদির। যদিও স্কুলে উপবৃত্তির টাকা পাওয়ায় কিছুটা রেহাই পায়। একসময় ফেরদৌস তাঁর দাদীর কষ্ট দেখে সে নিজে লেখাপড়ার পাশাপাশি মুদি দোকান চালিয়ে ও রাজমিস্ত্রির কাজসহ বিভিন্ন দিন মজুরির কাজ করে সংসারে সহযোগীতা করে। এরপর এসএসসি পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে দেড় মাস এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে পরিক্ষায় অংশ নেয় ফেরদৌস। এবার এসএসসি পরীক্ষা পাস করে জীবনে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ জন্ম নেয় মনে। তবে শত বাঁধা-প্রতিকূলতা জয় করতে পারলেও দ্ররিদ্রতার কাছে হার মানতে হবে বলে সংকয় ভুগছে। কলেজ পড়াশোনা চালাতে ভর্তি,বই কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

ফেরদৌস বলেন,আমার বাবা-মা আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দাদির কাছেই বড় হয়েছি। দাদির সহযোগিতায় পড়াশোনাও করেছি। দাদি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করেছি আর দোকানও চালিয়েছি। সবকিছুর সঙ্গে পড়াশোনাও করেছি। আমার কলেজে পড়ার অনেক ইচ্ছা কিন্তু খরচ জোগাতে পারবো কি না জানি না আমি।

প্রতিবেশী রোজি আক্তার বলেন,ছোট বেলায় ফেরদৌস কে ছেড়ে তার বাবা মা চলে গেলে তাঁর দাদী খুব কষ্ট করে সংসার চালিয়েছে তাঁকে নিয়ে। ফেরদৌসকে আমি পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ফ্রীতে পড়িয়েছি। বর্তমানে সে এসএসসি পাশ করছে। তাঁর পড়ালেখার ইচ্ছা আছে। আমরা এলাকাবাসী চাই তাঁকে যেনো সরকারীভাবে কেনো সহযোগিতা করা হয়।

ফেরদৌসের দাদি মিলিক জান বলেন,ছোট বেলায় ফেরদৌসকে রেখে তাঁর মা বাবা চলে যাই। এর পর আমার ঘরে এক বেলা ভাত খাওয়ার মতো কিছু ছিলো না। আমি গাছের শুকনা পাতা জমা করে বিক্রি করেছি,গাছের কাঁঠাল বিক্রি করে ও অন্যের বাসা থেকে ভাত চাইয়ে এনে আমার নাতীকে খাওয়াছি। স্কুলে যাইতে পারতো না ড্রেসের জন্য আমি প্রতিবেশীর ছেলের পুরাতন ড্রেস তাঁকে এনে দিছি। খুব কষ্ট করে আমি তাঁকে লেখাপড়া করিয়েছি। যখন সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতনে ভর্তি হয়েছে তখন অভাব অনটনের কারনে প্রাইভেট পড়াতে পারেনি। যদি প্রাইভেট পড়াতে পাড়তাম তাহলে রেজাল্ট ভালো করতো আরো। বর্তমানে তাঁকে কলেজে ভর্তি সহ যাবতীয় খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকারী কেনো সাহায্য সহযোগিতা পেলে উপকার হতো।

সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুস ছালাম বলেন,সে কাজ করে পাশাপাশি লেখাপড়া করেছে এবং উত্তীর্ণ হয়েছে এটাই সত্যিই অনেক আনন্দের। তাঁর স্কুল থেকে কাগজপত্র তুলার বিষয়টি সহায়তা থাকবে। ব্যক্তিগতভাবেও সহযোগিতা থাকবে আমার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান জানান,ওই শিক্ষার্থী একটা আবেদন করলে আমরা সরকারিভাবে তাকে পড়াশোনা চালানোর জন্য সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবো।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security