দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সন্ত্রাসী হামলায় ২৯ জনকে হারানোর শোক কাটিয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণ।
ইংল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের ভোটাররা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ৪ কোটি ৬৯ লাখ। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের জন্য ৬৫০ জন এমপিকে বেছে নেবেন তারা। আগের বছরের চেয়ে এবারের ভোটার সংখ্যা বেশি। ২০১৫ সালে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, প্যারিশ হলকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ও লন্ডনে হামলা হওয়ায় নির্বাচনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মেট্রোপলিটন পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রত্যেক লন্ডন বরোতে সুনির্দিষ্ট করে পুলিশি অভিযান চলবে। লন্ডনজুড়ে বিশেষায়িত এবং উচ্চ পর্যায়ের অভিযানের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনও সময় তা পরিচালনা করা হবে।’
হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হলে একটি দলকে অন্তত ৩২৬টি আসনে জয়ী হতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যরাত নাগাদ কয়েকটি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আর শুক্রবার দুপুর নাগাদ পাওয়া যাবে চূড়ান্ত ফলাফল।
দেড় মাসের নির্বাচনি প্রচারণা ও প্রতিশ্রুতি-পর্ব শেষে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের রায়ের মুখোমুখি হবে। ১৯৭৪ সালের পর ব্রিটেনে এটিই প্রথম আগাম নির্বাচন।
গত বছর ব্রেক্সিট গণভোটের পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সরে দাঁড়ান। ফলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি টোরি সরকারের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়ার পর তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
আগাম নির্বাচনের প্রচারণার শুরুতে ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গত মাসে লেবার পার্টির চেয়ে ১৬ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন কনজারভেটিভরা। কিন্তু নির্বাচনের দুইদিন আগে দুই দলের রেটিং ব্যবধান কমে মাত্র এক পয়েন্টে দাঁড়ায়। তবে ভোট গ্রহণের আগেরদিন অর্থাৎ বুধবার পরিচালিত সর্বশেষ কয়েকটি জনমত জরিপে মিশ্র ফল পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ জরিপে নাটকীয়ভাবে কনজারভেটিভদের এগিয়ে থাকার কথা বলা হচ্ছে।
সর্বশেষ ৫টি জরিপে দেখা গেছে, দুটিতে ব্যাপক ব্যবধানের কতা বলা হয়েছে, দুটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেওয়া হয়েছে এবং একটিতে পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ইউগভ-এর জরিপে বলা হয়েছে চূড়ান্ত জরিপে লেবার পার্টি তিন পয়েন্ট পিছিয়ে গেছে।
গার্ডিয়ান-আইসিএম-এর জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী থেরেসা মের দল ১২ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে করবিনের দলের তুলনায়। তাদের মতে, কনজারভেটিভরা ৪৬ ও লেবার পার্টি ৩৪ শতাংশ ভোট পাবে।
জরিপগুলোতে দাবি করা হয়েছে, দোদুল্যমান (সুইং ভোট) ভোটাররা থেরেসা মে’র দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। ইনডিপেন্ডেন্ট-কমরেস পরিচালিত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে, থেরেসা মে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন। এমনকি মার্গারেট থ্যাচারের পর সবচেয়ে বেশি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন কনজারভেটিভরা। তবে ক্রিয়াসলি নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে লেবার পার্টি ৩ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে কনজারভেটিভদের তুলনায়।
এ জরিপের ফল অনুসারে, লেবার পার্টি ৪১.৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। আর কনজারভেটিভরা পাবে ৩৮.৫ শতাংশ ভোট। কোম্পানিটি জানিয়েছে তাদের মার্জিন অব এরর হতে পারে ৩.২ শতাংশ।