রাজধানীর বিমানবন্দর-বনানী সড়কে লাগানো বিদেশি বনসাই গাছগুলো থাকছেই। তবে নতুন করে আর এ ধরনের গাছ লাগানো হবে না। একথা জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান। বিতর্কের মুখে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সওজ বনসাই না লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। বনসাই ইস্যুতে এ প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবেদ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে এটা বনসাই না। বনসাই হচ্ছে একটা গাছকে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট করে রাখা। আমরা যে গাছগুলো লাগিয়েছি, সেগুলো হচ্ছে ফাইকাস জাতীয় গাছ। ফাইকাস হচ্ছে গাছের একটি বিশেষ জাত। এর পরেও মন্ত্রী মহোদয় যখন নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা আর এই গাছ লাগাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা এই গাছগুলোকে আউট ডোর বনসাই বলে থাকে। সংসদ ভবন ও আর্মি স্টেডিয়ামসহ ঢাকার অনেক সড়কে এই জাতীয় অন্তত এক লাখ গাছ রয়েছে।’ এরই মধ্যে ৭০টি গাছ লাগানো হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানানিয়েছেন। তবে আবেদ মনসুর জানিয়েছেন, সড়কে এখন পর্যন্ত ৯০টি গাছ লাগানো হয়েছে। বাকিগুলো আর আমদানি করা হচ্ছে না।
সৌন্দর্য বর্ধনের পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। গাছ লাগানো ছাড়াও এই প্রকল্পে ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি, আধুনিক ডাস্টবিন, মিনি চা বাগান, সড়ক বাতি, গার্ডেন বেঞ্চ, এলইডি মনিটর, প্রতিবন্ধী ও বাচ্চাদের হ্যান্ড ট্রলি, ফ্রি ওয়াই-ফাই সংযোগ, আধুনিক টয়লেট, কৃত্রিম ঝরনা, চার কিলোমিটার সড়কে সাইকেল লেনসহ আরও আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে। নিরাপত্তার জন্য থাকবে ২৪০ জন নিরাপত্তা রক্ষী।
যাত্রী ছাউনিগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবহাওয়া বার্তা, সময় প্রদর্শন, গণপরিবহনের গতিপথের নির্দেশনাও থাকবে। এছাড়া বিদেশি ভিভিআইপি আগমনের সময় ডিজিটাল ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
তবে রাজধানীর সড়কে বিলবোর্ড লাগাতে হলে সিটি করপোরেশনের পূর্ব অনুমতি লাগবে। প্রতিষ্ঠানটি এখনও সিটি করপোরেশনের কাছে কোনও আবেদন করেনি।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গত বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিমানবন্দর সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্প এলাকায় ১২টি আধুনিক যাত্রী ছাউনি থাকছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার তিনটি স্মৃতিস্তম্ভ, মোবাইল ফোন চার্জ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবস্থাও থাকবে এই প্রকল্পে। এছাড়া থাকবে মিনি চা বাগান। পুরো এলাকা ৩৫০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আলোক সজ্জার জন্য আধুনিক বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ ২৯০ সেট ডিজিটাল এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি ও ৮০০ সেট গার্ডেন লাইট থাকবে।
প্রকল্প সম্পর্কে সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের পুরো কাজ শেষ হলে প্রকল্পের ছয় কিলোমিটার রাস্তার দৃশ্য পাল্টে যাবে। আমরা সব ধরনের মানুষের পরামর্শ নিয়েই প্রকল্পের কাজ করছি। উত্তর সিটির মেয়রেরও পরামর্শ নেওয়া হবে। এই সড়কটিই হবে দেশের একমাত্র আধুনিক ও নিরাপদ সড়ক।’