বাংলাদেশে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে গেছে উল্লেখ করে এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ারের সীমাবদ্ধতা ও নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার অভাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তা নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়েছে।পাশাপাশি বাল্যবিবাহ-সংশ্লিষ্ট সাম্প্রতিক আইনে ‘বিশেষ অবস্থায় বাল্যবিবাহ অনুমোদন’ দেওয়ায় উদ্বিগ্ন তারা।
তবে ২০১০ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি গ্রহণ, বাংলাদেশ গৃহকর্মী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন এবং পুলিশ হেফাজতে আসামি নির্যাতন ও মৃত্যু নিরোধ আইনকে ইতিবাচক ভাবে দেখছে জাতিসংঘ।মানব পাচার রোধে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা আইনের ও প্রশংসা করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ৬মাস আগে বিরোধীদলের একনেতার তিনসন্তানের অপহরণ হওয়ার বিষয়টি।
সে সময় জাতিসংঘের গ্রুপ ইনভলান্টারি এনফোর্স ডডি সাপেয়ারেন্স সরকারকে তাদের সন্ধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানায়। এক সপ্তাহ পরে ই হাম্মাম কাদের চৌধুরী নামে তাদের একজন মুক্তি পায়।
কিন্তু বাকি দুই ছেলে আইন জীবী মির আহমেদ বিন কাশেম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আজমি এখনো রাষ্ট্রের কাছে বন্দি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুম, অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গুলো তদন্ত করে দেখতে হবে। ঘটনার শিকার নাগরিকদের যথাযথ সহায়তা দিতে হবে অপহরণ ও গুম নিয়ে জাতিসংঘ রকমিটি বলে,সরকারের উচিত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান করা এবং তাদের আত্মীয়দের তদন্তের অগ্রগতি জানানো।
মানবাধিকার সংস্থা গুলো দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের ১৩০০ এরও বেশি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ৩২৫ টি গুমের ঘটনা ঘটেছে।এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে ও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়।
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই বিপুল পরিমাণ ঘটনা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের।প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদনে জাতিসংঘ অভিযোগ করে: ‘বিশেষ করে পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে জড়িত সেখানে মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ার সীমিত’ ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাক স্বাধীনতার অভাবের প্রসঙ্গ।বহুল আলোচিত ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি আইনের আওতায় ২০১৬ সালে ৩৫ জন সাংবাদিক, ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মীকে আটক করা হয়েছে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করে সংস্থাটি।
এছাড়া সম্প্রতি বাল্য বিবাহ নিয়ে নতুন আইনের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।বিশেষজ্ঞরা জানায়, আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে বাংলাদেশের ও নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ১৮ রাখা উচিত।জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি, বাক স্বাধীনতা রোধ ও বিশেষ অবস্থায় বাল্য বিবাহ অনুমোদনে বাংলাদেশে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।তারা এই বিষয় গুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা ও উঠে এসেছে।তাদের প্রতিবেদনে ‘ইতিবাচকদিক’ অধ্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রণয়ন করা পাঁচটি আইনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।২০১০ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি গ্রহণ, বাংলাদেশ গৃহ কর্মী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন, ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন এবং পুলিশ হেফাজতে আসামি নির্যাতন ও মৃত্যু নিরোধ আইনকে ও ইতিবাচক ভাবে দেখছে তারা।