রবিবার, এপ্রিল ১৪, ২০২৪

বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

যা যা মিস করেছেন

যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষকের এই গবেষণার তথ্য সোমবার নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তেমন ভূমিকম্প ঘটলে তা এ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও দুটি গতিশীল ভূগাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে।

দেশটির বুক চিরে প্রবাহিত বড় দুই নদী গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ের ২০ কি.মি পর্যন্ত বর্ষায় আসা বালি এবং কাঁদা মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। বিপুল পলিতে দুই নদীর প্রবাহ সংকুচিত হয়ে পানির আধার বিলীন হয়ে পড়েছে, যা ভূমিকম্পের একটি আগাম লক্ষণ। গবেষকরা বলছেন, ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ইতিহাসের ভয়াবহ যে সুনামি আঘাত হানে তা বাংলাদেশের একই ফল্ট লাইনে অবস্থিত। সুমাত্রার ওই সুনামিতে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩০,০০০ মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূপদার্থবিদ মাইকেল স্টেকলার ভুমিকম্প নিয়ে ন্যাচার জিওনায়েন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মূখ্য গবেষক। প্রতিবেদনে এ গবেষক বলেছেন, ‘সুমাত্রার মতো ক্রটি বাংলাদেশের বড় দুই নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বিদ্যমান।’ গবেষণায় ক্রটিপূর্ণ এ অবস্থার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে উল্লেখ করে এ ভূপদার্থবিদ জানান, ওই এলাকার ভূগর্ভে কি মাত্রায় চাপ তৈরি হচ্ছে সেটা যাচাই-বাছাইয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার বলেন, ২০০৪ সাল থেকে তারা যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাতে দেখা যায় ওই অঞ্চলে ভূগর্ভের প্রধান টেকটনিক প্লেটগুলো বন্ধ এবং সেগুলোর উপর অব্যাহতভাবে চাপ বাড়ছে। চাপের এ মাত্রা অব্যাহত থাকলে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে ওই অঞ্চলের বিদ্যমান ভূমির আকৃতিতে। এমনকি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভুমিকম্প আঘাত হানতে পারে ওই অঞ্চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক তার গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ফেয়ারফ্যাক্স মিডিয়াকে বলেন, গবেষকরা ভূগর্ভের মাটির লেয়ারে চাপ বাড়ার অবস্থা বুঝতে পারেন, ভূগর্ভে টেকটনিক প্লেটের অবস্থা দেখতে পান কিন্তু এসবের প্রভাবে কখন ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ কিছু ঘটবে তা নির্ণয় করা কঠিন। ভূগর্ভের মাটির লেয়ারের এ গঠন প্রক্রিয়া গত ৪’শ থেকে ২’হাজার ধরে চলে আসছে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার।

বাংলাদেশের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় যে ভূমিকম্প হবে সেটি  হবে বিশ্বের ভূমিকম্পের ইতিহাসে ভয়াবহ, জানান অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার। তিনি আরো বলেন, ‘আমার ধারণা এ ভূমিকম্পটি হবে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার। তবে এ মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে কি না, গেলে তা কত বেশি মাত্রার হবে তা বলা মুশকিল।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অন্যতম দরিদ্র এই অঞ্চলে এ ধরনের একটি ভূমিকম্প মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

তেমন কোনো ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূ-খণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মত কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি।

তাদের এই গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে এই ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে।

অধ্যাপক আখতার রয়টার্সকে বলেন, তেমন মাত্রার ভূমিকম্প সত্যিই হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতোটাই ভয়াবহ হবে যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়ত বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।

 

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security