আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে খালাস দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে স্থগিতাদেশ এসেছে।সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্থগিতের আদেশ দেওয়ায় আলোচিত মামলার এই আসামিদের মধ্যে কারাবন্দিরা এখন মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- ফয়সাল, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, খোকন, আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (২১ জুন) হাইকোর্টের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সোমবার (২০ জুন) সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদনটি করা হয়। এর আগে গত ১৫ জুন এ মামলায় আপিলের রায়ে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ৬ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল এবং ৮ জনের যাবজ্জীবন বহাল রাখেন আদালত। এছাড়াও আসামিদের ১১ জনকে খালাস দেয়া হয়। দুজন মারা যাওয়ায় তাদের ব্যাপারে কোনো আদেশ আসেনি এবং একজন আপিল করেননি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৭ মে দুপুরে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারকে। নিহতের ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি বাদি হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম দীপুকে। এছাড়া এজাহারে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেকুজ্জামান প্রায় দুই মাস তদন্ত শেষে ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আসামিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন ও জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে ৫ আসামি বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারক প্রধান আসামি নূরুল ইসলাম দীপু ও যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে খালাস দেয়া হয়। ওই বছরই আসামিরা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০০৯ সালের নভেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়। তিনদিন শুনানির পর আপিলটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে বিচারপতি আবু তারিক ও বিচারপতি মো. আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি চলাকালে ২০১০ সালের ৭ জুলাই আপিলটি তৎকালীন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। এভাবে পার হয়ে যায় প্রায় ৭ বছর।
চলতি বছরের শুরুতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। আসামিদের মধ্যে নুরুল ইসলাম সরকারসহ ১৭ জন কারাগারে। সেখানে মারা গেছে দুই অভিযুক্ত। প্রধান আসামি দিপুসহ ৯ জন ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।