পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফোনসেকা’র এক কোটি দশ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাবার পর বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদের অর্থ পাচার ও ট্যাক্স ফাঁকিতে কী ধরনের সহায়তা করেছে নথিগুলোতে তার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
ইতোমধ্যে বিশ্বের ৭৮টি দেশ ওই নথিগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছে এবং অর্থ পাচারের খবর ফাঁস হওয়ায় আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর পদত্যাগের দাবি ওঠেছে।
গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে পৃথিবী জুড়ে সুনাম রয়েছে মোসাক ফোনসেকা’র। এটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকেই সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে ওই ১ কোটি ১০ লাখ নথিপত্র। এই নথিগুলোই প্রমাণ দিচ্ছে যে, মোসাক ফোনসেকা তার মক্কেলদেরকে অর্থ পাচার, ট্যাক্স ফাঁকি এবং বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে এই আইনি প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদেরকে আইনি পরামর্শ দিয়ে আসছে।
যদিও নথি ফাঁসের ঘটনার আগে নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া মোসাক ফোনসেকা নামক প্রতিষ্ঠানটির খবর সাধারণ মানুষ জানতো না বললেই চলে।
বিশ্বের নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিভিন্ন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের সম্পদকে গোপন করে রাখছেন। এরই মধ্যে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রাইম অব সেঞ্চুরি’।
‘পানামা পেপারস’ ফাঁস হয়ে পড়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, সেলিব্রেটি, প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ তালিকায় রয়েছেন ভারতের বিভিন্ন শ্রেণীর ৫ শতাধিক প্রভাবশালী।
তার মধ্যে অন্যতম মেগা স্টার অমিতাভ বচ্চন, তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, কেপি সিং, ইন্ডিয়াবুলসের মালিক সমীর গেহলাউত, মুম্বইয়ের গ্যাংলর্ড হিসেবে খ্যাত প্রয়াত ইকবাল মিরচি, গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি।
পানামাভিত্তিক আইনী প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার কাছ থেকে জার্মানির পত্রিকা সুধেউটশে জেইটাং এ সংক্রান্ত এক কোটি ১০ লাখ গোপন নথি হাতে পেয়েছে। কার কাছ থেকে তারা এগুলো পেয়েছে তা প্রকাশ করে নি। তবে বলেছে, এসব নথি খাঁটি।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৩৪টি ভারতীয় পাসপোর্ট এবং ৩৬ হাজার নথির ওপর তারা আট মাস তদন্ত চালিয়েছে।
পানামা পেপারসে কর ফাঁকি ও গসম্পদ গোপনের তালিকায় রয়েছে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রায়, ডিএলএফ স্বত্বাধিকারী কেপি সিং ও তার পরিবারের আরও ৯ সদস্য, অ্যাপোলো টায়ারস, ইন্ডিয়ান বুলস থেকে আদানি গ্রুপের গৌতম আদানি ও তার বড় ভাই বিনোদ আদানির নাম।
দুই রাজনৈতিক ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিশির বাজোরিয়া এবং লোকসত্তা পার্টির দিল্লি ইউনিটের সাবেক প্রধান অনুরাগ কেজরিওয়ালের নাম।
ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচার করতে, কর ফাঁকি দিতে এবং বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে এই আইনি প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছে।