মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

পুলিশের নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক- জোড়া লাগল ভেঙে যাওয়া সংসার

যা যা মিস করেছেন

কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : গাজীপুরে গার্মেন্টেসে চাকুরি করতে গিয়ে রনি মিয়া (২৪) ও হেপি আক্তার (২২) দুজনের পরিচয়। ভাললাগা ও প্রেম। অতঃপর বিয়ে ও সংসার জীবন। রনি মিয়ার বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলায় চরমধুয়া নামাপাড়ায়। আর হেপির বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় রাজনগর (মোড়লবাড়ি) গ্রামে।

দুজনের দাম্পত্য জীবন ভালভাবেই কাটছিল। হেপি আক্তার গার্মেন্টেসে চাকুরি করলেও একসময় রনি মিয়া বেকার হয়ে পড়েন। সংসারে অভাব অনটন ও টানাপোড়েন শুরু হয়। স্ত্রীর আয়ের ওপর সংসারের চাপ কমাতে নিজের ও স্ত্রীর জমানো টাকা দিয়ে অটোরিকশা (ব্যাটারি চালিত) কিনে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় নিজেই চালাতে থাকেন। এভাবে ভালই যাচ্ছিল তাদের সংসার জীবন।

স্ত্রী ১০ দিনের ছুটি পেলে রনি মিয়া তার রিকশাটি পরিচিত একজনের কাছে ভাড়া দিয়ে শ্বশুরবাড়ি কলমাকান্দায় বেড়াতে আসেন। সেখান থেকে ফিরে জানতে পারেন তার রিকশাটি ট্রাকের চাপায় দুমড়ে-মুচড়ে বিকল হয়ে গেছে। তারা দুজনে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এই বুঝি সুখ নামক বস্তুটা তাদের নাগালে বাহিরে চলে গেল।

রনি মিয়া দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া রিকশাটি নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অর্থ ও অন্যদের কাছ থেকে ধার দেনা করে আরো কিছু টাকা সংগ্রহ করেন। ওই এলাকায় টংয়ের দোকান ক্রয় করেন এবং কিছু মনিহারি মালামাল তুলে টংয়ের দোকানটি চালু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই অবিক্রিত পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে।

নিজের সততা ও বিবেকের তাড়নায় ব্যবহার অনুপযোগী পণ্যগুলো ফেলে দেন এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হন। এবারও রনি পড়ে যান অর্থ সংকটে। একদিকে ঘরভাড়া ও সংসারের খরচ, অন্যদিকে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার চাপ। এমন মহুর্তে দিশেহারা হয়ে গোপনে স্ত্রীর কানের দোল দুইটি বন্ধক রেখে দেনার দায় থেকে মুক্তিপান তিনি।

হেপি কানের দোল না পেয়ে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে রনি তার স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে হেপি কানের দোল না এনে দিলে সংসার করবে না সাফ জানিয়ে দেন। যেই কথা সেই কাজ- হেপি রাগ করে সোজা চলে আসেন বাবার বাড়ি কলমাকান্দায়। গেল ঈদের পর থেকে বেশ কিছু দিন যাবত তাদের পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকে। হেপি সংসার করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তার কানে দোল এনে না দিবে।

এদিকে হেপির বাবার বাড়ির স্থানীয় একটি চক্র রনির সাথে হেপির সংসার ভাঙতে ডিভোর্স করাতে চেষ্টা করে। হেপিও ডিভোর্সের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েও নেন।

রনি মিয়া ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারানোর পর বড় বোনের কাছে থেকে বড় হওয়ার স্মৃতি ও আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পেতে তার অতীতে হাতে নেওয়া প্রতিটি কর্মকান্ডে পরাজিত হন। এবারও বুঝি তার চারবছরের সাজানো সংসার ভেঙে যাচ্ছে- এমন পরাজয়ের শঙ্কা, চিন্তা ও হতাশার ভাজ তার মাথায় নাড়া দিয়ে ওঠে। কিছুটা মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েন রনি মিয়া।

গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতে কলমাকান্দার ওসিকে মোবাইলে এ বিষয়টি অবগত করেন ও তার সহায়তা চান রনি মিয়া। উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পরেরদিন দুপক্ষকে থানায় আসতে বলেন ওসি।

গত শনিবার (১৬ জুলাই) কলমাকান্দা থানার ওসি মো. আবদুল আহাদ খান থানার নারী ও শিশু ডেস্কের মাধ্যমে রনি ও হেপির অভিযেগের বিষয়গুলো শুনেন। টানা দুই ঘন্টা উভয়পক্ষের কথা শুনা ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রেষনামূলক কথা বলেন ওসি। একপর্যায়ে রনি ও হেপির সম্পর্কের বিষয়টি তাদের দুজনের উপর ছেড়ে দেন। পরে তারা দুজনে দুজনার হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে পথ চলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

রনি শেরপুরে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ পেয়েছেন বলে জানায়। সে তার স্ত্রীকে কানের দোল আগামি দুই-তিন মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দিলে হেপি খুবই খুশি হন।

সংশ্লিষ্ট থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে কানের দোল থেকেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অনেক অনেক বেশী মূল্যবান এ বিষয়টি তারা দুজনে অনুধাবন করতে পেরেছেন। সংসার ভেঙে যাওয়ার দারপ্রান্তে থেকেও এ ডেস্কের মাধ্যমে পুনরায় জোড়া লাগলো রনি ও হেপির চার বছরের দাম্পত্য জীবনের সংসার।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security