শনিবার, মে ৪, ২০২৪

দুর্নীতিকে প্রশ্রয় নয়, জিরো টলারেন্স: প্রধান বিচারপতি

যা যা মিস করেছেন

দুর্নীতিকে ক্যান্সার উল্লেখ করে বিচার বিভাগে দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেবো না। দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

রোববার (২ ডিসেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সংবর্ধনার সময় প্রধান বিচারপতি এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি মামলার জট কমানো, বিচার বিভাগ থেকে দুর্নীতি দূর করা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয়ে কাজ করার কথা ব্যক্ত করেন

আঙ্গুলে ক্যান্সার হলে যেমন কেটে ফেলতে হয়, দুর্নীতিও তেমনি। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া হবে ঘোষণা দেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নতুন মাত্রায় উন্নীত করার মাধ্যমে আমার প্রতি আপনাদের দেখানো এই সম্মান সমুন্নত রাখা সম্ভব। বাংলাদেশের সকল বিজ্ঞ আইনজীবী, সকল স্তরের বিজ্ঞ বিচারক, সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাষ্ট্রের অপর দুইটি বিভাগের সক্রিয় সহযোগিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া আমার উপর অর্পিত এই পবিত্র দায়িত্ব সফলভাবে পালন করা কঠিন হবে। বার ও বেঞ্চ হলো একটি পাখির দুইটি ডানা আর জুডিশিয়ারি হলো সমস্ত দেহ। পাখা দুটি সমানভাবে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। বারের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সর্বস্তরে মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, আদালত অনুপাতে বিচারকার্যে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, আদালতসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, বিচার বিভাগে ডিজিটালাইজেশন, আধুনিক বিচার প্রশাসন কৌশল প্রণয়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ, বিচার কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের যোগান, রাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতার নিরিখে বিচারকদের প্রয়োজনীয় দাবি পূরণসহ আরও যেসব বিষয় রয়েছে সে সম্পর্কে আমি সজাগ ও সচেতন রয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেটদের স্টেনোগ্রাফার দেওয়া হয়েছে। সহকারী জজদেরও স্টেনোগ্রাফার দেওয়া গেল মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়তে পারে।

ন্যায়বিচারে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক বিজ্ঞ আইনজীবীগণের সমস্যা সম্পর্কেও আমি জ্ঞাত আছি। আমি বিশ্বাস করি,বিচার বিভাগের এই সকল প্রয়োজন পূরণে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল সকল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা আগের চেয়ে বেশি গতিতে চলবে। বিচার বিভাগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা যতদূর সম্ভব সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যে জাতি তার ৩০ লক্ষ সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এবং কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে, অসীম সাহসিকতার সাথে জীবন বাজি রেখে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পারে, সে জাতি বিচার বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না- এটা আমার কখনই বিশ্বাস হয় না। আমি বরাবর আশাবাদী একজন মানুষ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “ব্যর্থ না হওয়ার সব চাইতে নিশ্চিন্ত পথ হলো সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্প হওয়া।” বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানের জন্য নেতৃত্বের দায়িত্ব আমাদের সকলকে যৌথভাবে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করলে অবশ্যই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব ইনশাহ আল্লাহ। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয় তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।

বিচার বিভাগের সন্ধিক্ষণে কর্মকৌশল নির্ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র এক হাজার নয়শ জন বিচারকের কাঁধে যে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে তা বিচার বিভাগের জন্য কোনোভাবেই

সুখকর নয়। আমার দায়িত্বভার গ্রহণের সূচনালগ্নে সকল স্তরের বিজ্ঞ বিচারকদের আহ্বান জানাব, আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। এটি হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলার জট থেকে মুক্তির যুদ্ধ।

মামলাজট নিরসনে মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের সকল অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ৮টি বিভাগের জন্য একজন করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতিকে প্রধান করে একটি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতিমাসে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করব। পুরাতন মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইস এবং মনিটরিং করা হবে। সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক সময় ও দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রত্যেক বিচারককে মামলা নিষ্পত্তির অভূতপূর্ব অভিযাত্রায় অগ্রসেনানী হওয়ার এক ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা দয়া করে জুনিয়র আইনজীবীদের প্রতি একটু সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাবেন। তাঁদের কষ্ট আমি অনুভব করি, যেহেতু আমি নিজে অনেক কষ্ট করেছি। জুনিয়র আইনজীবীদের অনুরোধ করব শক্তি হবে শিক্ষা, জ্ঞান ও দীক্ষার। সম্মান অর্জন করতে গেলে সম্মান দিতে জানতে হবে। আমি আমার সহকর্মীদের অনুরোধ করব, আপনারা সবার প্রতি আপনাদের শপথের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ ও ব্যবহার করবেন।

দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়

 

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security