শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

“নোংরা ক্যাম্পাস রাজনীতির শেষ কোথায় ?”

যা যা মিস করেছেন

‘ছাত্র রাজনীতি ভাল না খারাপ? এমন প্রশ্ন উত্থাপন করলে একজন সাধারণ মানুষ একে খারাপ বলেই দাবি করবে।
এর কারণ সবার জানা। বর্তমান ছাত্র রাজনীতি তার পরিছন্ন ধারা থেকে নোংরা ধারায় চলে এসেছে। ফলে মেধাবী ছাত্র বা সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের রাজনীতিতে দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।
বাংলার ইতিহাসে ছাত্ররা যেখানে গৌরব ময় রাজনীতিরর সাক্ষী সেখানে আজ এমন বাস্তবতা কেন ?

নদীরর গতিপথ যদি পরিবর্তন হয় তবে এর সৌন্দর্যেরও পরিবর্তন ঘটে। কখনও সৌন্দর্য বাড়ে আবার কখনও কমে। ছাত্র রাজনীতির বেলাও সেই টি ঘটেছে। গতিপথ পরিবর্তনের ফলে এর সৌন্দর্যের দিক কমে আজ অনীহার সৃষ্টি করেছে।

কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির প্রতি আমার একটি ইতিবাচক ধারণা কাজ করতো । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমার ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেছে । দলাদলি , মারামারি আর ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই এখানে সবাই রাজনীতি করে । আদর্শের কোন স্থান এতে নেই । খুব ভদ্র ছেলেদেরকেও ক্যাম্পাস রাজনীতিতে জড়িয়ে মস্তবড় সন্ত্রাস হতে দেখেছি । ক্ষমতার লোভ কিভাবে মানুষকে হিংস্র জন্তুতে রুপান্তরিত করে তার বাস্তব অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি । বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীত মুখরোচক গল্পে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র রাজনীতি মানেই হাতের কলম ফেলে দিয়ে অস্র তুলে নেয়া, দলীয়করন, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষন, ক্ষমতার অপব্যবহার, মিছিল মিটিং, ভাংচুর। পেশাদার রাজনীতিবিদদের সংখ্যা হাতে গোনা অল্প সংখ্যক, জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ কর্মজীবী। এদের কোন রাজনৈতিক দলের প্র্তি সমর্থন থাকলেও কোন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়। এর ফলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছাত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। কারন খুব সহজেই ছাত্রদেরকে কাজে লাগানো যাচ্ছে, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে, বিভিন্ন প্রচরনায়, এমনকি জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদেরকে ফায়েদা লুটে নেয়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে সুষ্ঠু ধারার ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে না। ছাত্ররা আজ স্বাধীন চিন্তাধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এখন দেশে একটা বিপদজনক রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে ৷ জিজ্ঞেস করলেই তারা স্মার্টলি জবাব দেয়, ‘আমি রাজনীতি পছন্দ করি না৷’ শুধু নতুন প্রজন্মই নয়, সব বয়সের মানুষের মধ্যেই রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের অনীহা কাজ করে ৷ সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে এক ধরনের ভয় পায় ৷ তাই দূরে থাকে ৷ এখন আর কেউ চান না, তার সন্তান ছাত্ররাজনীতি করুক৷ আর মন্ত্রী-এমপি-নেতা-আমলারা তো তাদের সন্তানদের বিদেশেই পড়ান৷ তাই দেশ, রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতি গোল্লায় গেলে তাদের যেন কিছু যায় আসে না৷

আজকাল রাজনীতি বলতে সবাই ক্ষমতার প্রয়োগকে বুঝি। আর অতিরিক্ত ক্ষমতা অর্জন করতে এবং প্রয়োগ করতে অনিয়ম কে বেছে নেয়। আজ আমরা ক্ষমতা বলতে বুঝি ফরম ফিলাপের সময় যদি ৫০০ টাকা কম দেওয়া যায় কিংবা ভার্সিটিতে হলে একটা সিট পাওয়া যায় কোন ছাত্র নেতাকে ধরে তাহলেই হলো রাজনীতির সার্থকতা, নেতা সার্থক আর আমরা নেতা কে পেয়ে খুশি। আর আমাদের মত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আকাঙ্ক্ষা পুর্ণ। আসলে কি তাই?

ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে ক্যাম্পাস বিষয়ক রীতি-নীতির সাথে জড়িত ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের ও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনার জন্য গৃহীত নীতি। ছাত্ররা ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোন জাতীয় রাজনীতিতে জড়ানো ছাত্ররাজনীতির নিয়ম বহির্ভুত কাজ। তবে জাতীয় সংকটের উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত দেশের স্বার্থে।

যদি ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে ক্যাম্পাসের কোন উন্নয়ন যেমন একাডেমিক শিক্ষা সম্পর্কিত, আবাসিক হল সম্পর্কিত, ফি বিষয়ক, শিক্ষক, ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির অভাব সম্পর্কিত, সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করন ইত্যাদি বিষয়ে ছাত্র নেতাদের কার্যকরী ভুমিকা রাখা উচিত। যদি ছাত্ররাজনীতি বা ছাত্রনেতাদের দ্বারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কোন উন্নয়ন না হয় এবং এখান থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতা উঠে আসতে না পারে তবে ছাত্ররাজনীতির স্বার্থকতা কোথায়?

ছাত্র রাজনীতির অবস্থান আমাদের দেশে কোথায় আসুন একটু দেখে নেই। আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতি জায়েজ কিন্তু যদি জায়েজ কাজ ও নীতিগুলো পালন না করি তাহলে এর সার্থকতা কোথায়? এদেশে ছাত্ররাজনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান। ছাত্র সংগঠন গুলো হচ্ছে দল গুলোর অঙ্গদল। ফলে ছাত্র নেতারা দলীয় নেতাদের অনুগামী হয়। তাই ছাত্র নেতারা আপন ব্যক্তি সত্তা ও আদর্শ থেকে সরে আসে। এতে করে ছাত্র রাজনীতির প্রকৃত দিকটি আমরা দেখতে পাই না। আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন না দিয়ে নামধারী ছাত্ররাজনীতিকে মস্তকহীন মানবে পরিনত করে শুধু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা ছাড়া আর কিছু না।

বর্তমানে একদিনে ছাত্র রাজনীতি এতোটা নোংরা ও কদর্য হয়নি। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো কম দায়ী নয়। ছাত্র রাজনীতিকে পেশিশক্তি ও ক্ষমতা আরোহণের সিঁড়ি ও ক্ষমতায় টিকে থাকার খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে বিভিন্ন সরকার। বর্তমান ছাত্র রাজনীতির এ বীভৎস চেহারার জন্য এটি একমাত্র অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের চেয়ে ছাত্ররাজনীতিতে এগিয়ে আছে কিন্তু দুখের কথা হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরে কোন নেতা তৃণমুল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারেনি শুধু আদর্শের গণতন্ত্রিক রীতি না মেনে। তবে কিছু তৃণমুল থেকে আসা রাজনীতিবিদ জাতীয় পর্যায়ে আছে যাদের জন্য আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে গনতন্ত্র ঠিকে আছে। কিন্তু যদি চলমান ছাত্র রাজনীতি চলতে থাকে তবে খুব শীগ্রই বাংলাদেশ প্রকৃত নেতা শুন্য হয়ে পড়বে। আর জন্ম নিবে জন্মলব্ধ নেতা যারা জন্ম থেকে নেতা, যারা জুনিয়র হয়েও সিনিয়র নেতা হবেন আর তাদের ছবি ঝুলবে বয়বৃদ্ধ নেতার উপরে। সেদিন জন্মনেতার জয় হবে ঠিকই কিন্তু হেরে যাবে গণতন্ত্র, হেরে যাবে বাংলাদেশ ।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security