শনিবার, মে ৪, ২০২৪

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে সমালোচনার ঝড়

যা যা মিস করেছেন

স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। ‘খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় সদস্যরা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপোতে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রী আসছে মন্ত্রী যাচ্ছে কিন্তু মিঠু সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়েছে। এজন্য সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জবাবদিহিতা চান তারা। এসব অভিযোগের জবাবে দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তবে মিঠু সিন্ডিকেট নিয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের একাদশতম তথা শীতকালীন অধিবেশনে আজকের বৈঠকে ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ প্রথম স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা। এ খাতের দুর্নীতি ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না। স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতির ডিপোতে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলতে পারবেন স্বাস্থ্য অধিদফতরে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেডিকেল পরীক্ষার কত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে? সেই সময় মন্ত্রী সচিব বলেছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নাই। এখন সিআইডি বলছে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ১১২টি মেডিক্যাল কলেজের তথ্য দিলেন। কিন্তু এগুলোর গুণগত মান কী? সংখ্যা দিয়ে কী করবো? যদি মান না থাকে। বঙ্গবন্ধুর নামে যে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে সেটি কোনও গ্রেডেই নেই। দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ হয় এখানে। নাম ও কামের মিল থাকতে হবে। তিনি জানতে চান, করোনার ভ্যাকসিন কত দামে কিনলাম? বাণিজ্য হচ্ছে কিনা জানা দরকার।

বিএনপি দলীয় মহিলা এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে কি লাভ হবে? যদি তার সুফল সাধারণ মানুষ না পায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হয়তো কমবে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতুল বরাদ্দ, চরম দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা- এগুলো কি কমবে? চিকিৎসার খরচ বাংলাদেশে বাড়ছে। পৃথিবীর কোনও দেশ করোনা নিয়ে ব্যবসা করেনি। বাংলাদেশে সেটি দেখেছি। করোনার শুরু থেকে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি। আমরা দেখেছি নকল এন-৯৫ মাস্ক।
তিনি বলেন, এবার আমরা প্রথম জানতে পারি স্বাস্থ্য খাতে মিঠু সিন্ডিকেটের কথা। মন্ত্রী এসেছেন মন্ত্রী গেছেন একজন একজন করে তিনজন মন্ত্রী বদল হয়েছেন স্বাস্থ্যখাতে গত ১২ বছরে। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে দেখি মিঠু সিন্টিকেট এখনো তার জায়গায় রয়ে গেছে। মিঠু সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কোন রকম কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। সকলের সাথে মিঠুর এতোই সম্পর্ক। দুর্নীতি কেন কমে না সেটাও কিন্তু ভালো মতো জানি। এই করোনাকালে দুই একটা চুনোপুটিকে বাদ দিয়ে কোন রাঘব বোয়ালকে ধরা হয় নাই। করোনার শুরুর দিকে মাস্ক কেলেঙ্কারির সাথে আওয়ামী লীগের একজন উচ্চপদস্থ নেতার নাম এসেছে। এখন পুলিশ তাকে খুঁজছে। করোনা পরীক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবার পরে দুজন ব্যক্তি শাহেদ এবং সাবরিনাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। আদালত কর্তৃক প্রতারক হিসেবে শাহেদের সাথে কি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং এবং স্বাস্থ্য সচিব উপস্থিত হয়ে করোনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে?

জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় বেশি আত্মনিয়োগ করা উচিত। গবেষণার জন্য বরাদ্দ বেশি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিশেষায়িত সেবার ক্ষেত্রে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। দুর্নীতি কমানো দরকার। মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা দরকার।

গণফোরাম দলীয় এমপি মোকাব্বির খান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি সংবাদে আসছে। কারা করছে? এই দুঃসাহস কীভাবে পায়? যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সব দোষ আসে মন্ত্রী-এমপি- বা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে। অথচ দুর্নীতি হয় সচিব ও প্রকল্প পরিচালক লেভেলে। কিন্তু আমলাতন্ত্র এতো শক্তিশালী যে তারা ধরা ছোয়ার বাইরে। এই ব্যাপারে আলোচনা হওয়া দরকার। আজ পর্যন্ত একটি নজিরও নাই যে একজন প্রকল্প পরিচালক বা একজন সচিব যার দায়িত্বে অবহেলার জন্য দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যে কোন বড় বড় প্রকল্পগুলো সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা নীতি নির্ধারণীতে থাকেন এটা পাস হয়। কিন্তু এটা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন আমাদের সচিব সাহেবরা। প্রজেক্ট ডাইরেক্টর সাহেবরা। যারা বাস্তবায়নে থাকেন, তাদের হাত দিয়েই বড় বড় দুর্নীতি হয়। আমলারা যদি অসৎ হয় প্রকল্প পরিচালক যদি অসৎ হয় যত ভালো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হোক না কেন, আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যত আলোচনা সমালোচনা করি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, কিন্তু ভালো আমলা যদি না হয় তাহলে ভালোকাজ আদায় করা অত্যন্ত কঠিন।

জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি এ বিষয়ে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দেইনি। সবচেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পেয়েছি। চুক্তিতে আছে, ভারত যে দামে নেবে আমাদেরও সেই দামে দেবে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। সেইভাবে টিকা পেয়েছি। চিকিৎসা সুরক্ষা আইন খুব তাড়াতাড়ি সংসদে আনবো। অনেকে বলেন, করোনায় অব্যবস্থাপনা আছে। করোনার বিষয়ে শুরুতে কেউ কিছু জানতো? যখন জানা গেল, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনাকালে রোগীর পেছনে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। যারা আইসিইউতে ছিলেন, ৫০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন খরচ হয়েছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security