সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর শীত মেীসুমে অবৈধভাবে পাখি শিকারের অগ্রগতি চলমান থাকলেও এবার মৎস্য নিধন ও বন উজাড়ের ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে।
একসময়ে টাঙ্গুয়ার হাওর সবুজ বৃক্ষের সজীবতা ও পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকলেও এখন এ যেন বিরাণ ভূমি! নেই আগের মতো পাখির পদচারণা, নেই সবুজের সমারোহ। প্রতি বছর শীতের সময় সুদূর সাইবেরিয়া থেকে লক্ষ লক্ষ পাখি এসে ভিড় জমায় পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত এই টাঙ্গুয়ার হাওরে। কিন্তু আগত অতিথি পাখিদের নিরাপদে টাংগুয়ার স্বচ্ছ নিশ্বাস নিতে দেয় না হাওরপাড়ের অবৈধ পাখি শিকারীরা।
রাতের আঁধারে টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, শিকারের দল ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অতিথি পাখি নিধন যজ্ঞে। সন্ধ্যা হতে না হতেই এসব দস্যুর দল তীব্র আলোর টর্চলাইট, পাখি মারার হাতিয়ার(স্থানীয় ভাষায়— থুড়ি, মঘা, হাত্তর) ও বস্তা হাতে বেড়িয়ে পড়ে পাখি শিকারে।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে সন্ধ্যার পর পাখিরা যখন চোখ বুজে একটু স্বস্থির নিশ্বাস নেয়, ঠিক তখনি প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধক এসব পাখিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় শিকারিরা। তীব্র আলোর টর্চলাইট পাখিদের চোখের দিকে তাক করে, ফলে পাখি নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়ে একজায়গায় বসে থাকে। এমন সময় শিকারির নৃসংশ আঘাতে জব্দ হয় অতিথি পাখি।
এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কমিনিটি গার্ড ও আনসার সদস্যরা নিচ্ছেন না কোনো যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, আনসার বাহিনী ও কমিউনিটি গার্ড সদস্যরা বসে বসে অলস সময় পার করছে। চোখের সামনে হাওরের বৃক্ষ নিধন, মৎস্য নিধন ও পাখি নিধন দেখেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে করে ধ্বংস হচ্ছে জলজ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ সহ, মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিযায়ী বিভিন্ন পাখিদের মধ্যে রয়েছে—বেগুনি কালেম, ডাহুক, লেনজা, প্যালাসেস, পানকৌড়ি, গাঙচিল, কিংস্টর্ক, সারস, শঙ্কচিল, মরচেরং ভুঁতি হাস, পিয়ং হাঁস, ভাঁলি হাঁস, ডুবুরি, মৌলভী, তিলা, রামের কুর্রা ও বোর্রাল সহ নানা ধরণের পাখি।
এ ব্যাপারে হাওরপাড়ের শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন, বর্তমানে হাওরটি প্রায় অভিভাবক শূন্য। এই হাওরটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও, মিলছে না প্রশাসনিক তদারকি। এদিকে হাওরে নিয়োজিত আনসার বাহিনী ও কমিউনিটি গার্ড টিম শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছে। তাই টাঙ্গুয়ার হাওরের বনায়ন সংরক্ষণে জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার অক্ষুন্ন রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
কমিউনিটি গার্ড সভাপতি মনির মিয়া দায় এরিয়ে বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে হাওরের জন্য যথেষ্ট করছি। আমরা সংখ্যালঘু হওয়ায় যথেষ্ট পেরে উঠছি না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ এ ব্যাপারে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।