বলিউডে পরিচালক আলী আব্বাস জাফরের বয়স মাত্র পাঁচ বছর। কিন্তু এরই মধ্যে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন এই তরুণ পরিচালক। ‘সুলতান’ ছবির সাফল্যের পর আরও সাবধানী তিনি। গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত ছবি ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’। মুক্তির প্রথম দিন ভারতসহ বিশ্বজুড়ে গর্জন শোনাচ্ছে ‘টাইগার’।
ধারণা করা হচ্ছে, আজ রোববারের মধ্যে ছবিটি ৩০০ কোটির ক্লাবে নিজের জায়গা করে নেবে। ছবির সাফল্যের জন্য বেশির ভাগ বাহবা ‘ভাইজান’ সালমান খান পাবেন, কিন্তু পরিচালক আলী আব্বাসের কৃতিত্বও নেহাত কম নয়।
ছবিটি সম্পর্কে আলী বলেন, আমি চেষ্টা করেছি আগের ছবিটির সফলতাটা যেন এবারও বজায় থাকে। তবে আমি প্রথমে ‘এক থা টাইগার’-এর সিক্যুয়েল হিসেবে ছবিটির গল্প লিখিনি। ২০১৪ সালে কিছু ভারতীয় নার্সকে বন্দী করা হয়েছিল। সেই ঘটনার ওপর আমি ছবির গল্প বুনেছি। তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাত্র ক্ষমতায় এসেছিলেন। ১০ দিনের চেষ্টায় সেই ভারতীয় নার্সদের মুক্ত করা হয়। তবে সেখানে কোনো অ্যাকশন ছিল না। আমি সেই কাহিনির ভিত্তিতে ছবিটিকে অ্যাকশনধর্মী বানিয়েছি। আর এ ধরনের গল্প সবাই পছন্দ করে। আমি ছবিতে দেখিয়েছি আমাদের এজেন্টরা কতটা দক্ষ। আমি ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর মধ্যে দিয়ে মানবিক দিকটা তুলে ধরেছি। ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর চিত্রনাট্য লেখার কাজ শেষ হওয়ার পর পরই ‘সুলতান’ ছবির শুটিং শুরু হয়। ‘সুলতান’-এর পর এই গল্পটা আদিত্য চোপড়াকে শোনাই। আমার কোথাও মনে হয়েছিল, এই ছবিটাকে ‘এক থা টাইগার’-এর সিক্যুয়েল হিসেবে বানানো যেতে পারে। আদিত্য স্যারেরও তা-ই মনে হয়। সালমান আর ক্যাটরিনার গল্পটিও দারুণ পছন্দ হয়।
সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের রসায়ন সম্পর্কে পরিচালক বলেন, তাঁদের কত পুরোনো সম্পর্ক। আর সালমান-ক্যাটরিনার মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুণ। আর তা পর্দায় ফুটে ওঠে। তাঁদের দেখে কখনোই মনে হয় না যে তাঁরা জোর করে রসায়ন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। খুব স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্দায় তাঁরা জুটি হিসেবে কাজ করেন। ভালো গান, ভালো গল্প হলে সেই রোমান্স আরও জোরদার হয়। আর ক্যাটরিনা অত্যন্ত সুন্দরী। এই দুজনকে পর্দায় একসঙ্গে দারুণ লাগে। তবে সালমানের দিকে একবার যে তাকাবে, সে-ই প্রেমে পড়বে। ‘সুলতান’ ছবিতে সালমানের সঙ্গে আনুশকা শর্মার রসায়নও দুর্দান্ত ছিল। সবাই সালমানকে অ্যাকশন হিরো হিসেবে জানেন। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি অনেক বড় মাপের একজন রোমান্টিক নায়ক। তিনি একজন ভারতীয়র মতোই রোমান্স করতে জানেন। তাই সেটা অনেক বাস্তব মনে হয়। সালমানের রোমান্সে কোনো নোংরামি থাকে না।
আমি এমন ছবি বানাই, যা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখতে পারবে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও পরম্পরার কথা মাথায় রেখে আমি ছবি নির্মাণ করি। ভারতীয় ছবি ভারতের মতো হওয়া চাই। তাই আমার ছবিতে এসব কিছু পাবেন না।
সালমান সম্পর্কে তিনি বলেন, সালমান সুপারস্টার তো নিশ্চয়। আমার এই ছবিতে তাঁকে কিন্তু সুপারম্যান হিসেবে দেখাইনি যে তাঁর এক ঘুষিতে কেউ উড়ে যাবে। এই ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো অনেক বাস্তবসম্মত। ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ ছবিতে সালমান একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
তাই ছবিতে কীভাবে অ্যাকশন করবে, অস্ত্র চালাবে, গুলি ছুড়বে, বিস্ফোরণ ঘটাবে—এ সবকিছুর ওপর অনেক গবেষণা করা হয়েছে। পেশাদার অ্যাকশন প্রশিক্ষকদের নিয়ে কাজ করেছি। ছবির এসব অ্যাকশন দৃশ্য ইরাক ও মরক্কোয় শুট করা হয়েছে। সেখানে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সবাইকে কাজ করতে হতো।
ভালোবেসে কাজ করলে সালমান খানকে সামলানো একেবারেই মুশকিল নয়। আমরা এর আগে ‘সুলতান’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। তাই এই ছবির ক্ষেত্রে আমাদের বোঝাপড়াটা দারুণ ছিল। আর এই ছবির চিত্রনাট্য সালমানের খুব পছন্দের। আমার আগের ছবিতে তাঁকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এই ছবিতে সালমান একজন এজেন্ট। তাই নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি অনেক ক্যালকুলেটিভ ছিলেন। আর সালমানের সঙ্গে আমার এখন পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছেন। আমি সালমানকে বড় ভাইয়ের মতো দেখি। তাঁর সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে তর্কবিতর্ক হয়; তবে তা সুস্থভাবে।